বর্তমান রাজনীতির গতিধারা বিশ্লেষণ করতে হলে কয়েকটি বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। ২৮ অক্টোবর রাজধানীজুড়ে যে ঘটনাবলির সৃষ্টি হলো, তাতে বোঝা গেল, ক্ষমতার জন্য লড়াইটা প্রকট হয়ে উঠেছে। দেখা গেল, বিদেশি শক্তিও এখন আমাদের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। আফসোস, যে জনগণ এই দেশের মালিক, ক্ষমতার রদবদলে তার কোনো ভূমিকা নেই বললেই চলে।
আমরা আমাদের রাজনীতিটাকে পেশিশক্তির আস্তানা বানিয়ে ছেড়েছি। যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তারা নানাভাবে নিজেদের পরিপুষ্ট করে তোলে। নৈতিক নানা সুবিধা নিয়ে তারা জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতিকে বুড়ো আঙুল দেখায়। এ পর্যন্ত যে কটা রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসেছে, তাদের প্রত্যেকেই জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখেনি, বরং নিজেদের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে। বহুদিনের আচরিত রাজনীতি-ধর্মে তাই ক্ষমতার বদল ছাড়া আর কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে না। কোন দল ক্ষমতায় এসে আখের গুছিয়ে নেবে, সেটাই যেন হয়ে উঠেছে রাজনীতির মূল লক্ষ্য। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণ কার প্রতি আস্থা রাখবে, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে।
২৮ অক্টোবরের সহিংসতায় একজন পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছেন। তাঁর প্রতি বিএনপির কর্মীরা সহিংস হয়ে ওঠেন। উপর্যুপরি আঘাতে তাঁর মৃত্যু ঘটে। এই মৃত্যুর জন্য কি শুধু বিএনপি দায়ী? আপাতদৃষ্টিতে বিএনপির উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। কিন্তু দৃষ্টি আরেকটু প্রসারিত করে ব্যাপারটি দেখলে আমরা বুঝতে পারব, যে অসহিষ্ণুতা রাজনীতির মাঠকে প্রায় অমানবিক করে তুলেছে, সেই অসহিষ্ণুতারই শিকার হয়েছেন কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম। একই দিনে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলকে কেন সভা করতে হবে, কেন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকবে না, সেটাই এখন অন্যতম বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কেউ কাউকে সহ্যই করতে পারছে না কেন, তা তলিয়ে দেখা উচিত। রাজনীতিতে পরস্পর মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যাবে, সংলাপ চলবে না—এগুলো কোনো কাজের কথা নয়।