আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২) সংশোধনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তাবকে অপ্রাসঙ্গিক ও বিভ্রান্তিকর বলে মন্তব্য করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। সুজন বলছে, ইসির পক্ষ থেকে ১৭টি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। এগুলোর মধ্যে তিনটি প্রস্তাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুটি প্রস্তাব নিয়ে সুজন কিছুটা বিভ্রান্ত ও উদ্বিগ্ন। কারণ প্রস্তাবগুলো অসম্পূর্ণ। শনিবার অনলাইনে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিচারপতি আবদুল মতিন, ড. বদিউল আলম মজুমদার, জাকির হোসেন, আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, আকবর হোসেন, ফারুক মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে পর্বতপ্রমাণ বাধা। সিইসি বলেছেন- সংবিধান অনুযায়ী বিদ্যমান কাঠামোতে তাঁরা নির্বাচন আয়োজনে বাধ্য। এই বক্তব্য সঠিক নয়। কারণ সংবিধান মানলে ইসি যেনতেন নির্বাচন আয়োজন করে রেহাই পাবে না। তাদের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। এজন্য ইসিকে যথেষ্ট ক্ষমতাও দেওয়া আছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব না হলে ইসির উচিত সরকারের সঙ্গে কথা বলা।
তিনি বলেন, ইসির প্রস্তাবিত সংশোধনীতে রাজনৈতিক দলের সব কমিটিতে ২০৩০ সালের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার বিষয়টি সমর্থনযোগ্য। পাশাপাশি মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীদের টিআইএন সার্টিফিকেট ও আয়কর প্রদানের প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার বিষয়টি সংযুক্ত করতে বলা হয়েছে। আরপিওর ১২ ধারায় এটি সংযুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু ৪৪ ক(২) ধারায় আয়কর রিটার্নের বিষয়টি বিদ্যমান আইনেই রয়েছে। শুধু আয়কর রিটার্নে প্রত্যয়নপত্র সম্পর্কিত নতুন বিধান যুক্ত করা হলে ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা থাকে। প্রার্থীদের এমনিতেই আয়কর রিটার্ন জমা দিতে অনীহা রয়েছে।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ভোটকেন্দ্রের অনিয়ম হলে প্রিসাইডিং অফিসারকে তাৎক্ষণিকভাবে ভোট বন্ধের বিষয়টি ২৫ ধারায় সংযুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের কারণে ইসি তদন্তসাপেক্ষে পুরো নির্বাচনী এলাকার ফলের গেজেট প্রকাশ স্থগিত, ফল বাতিল ও পুনর্নির্বাচনের নির্দেশের ক্ষমতা ইসিকে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই প্রস্তাবে বিভ্রান্তি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারণ নির্বাচন ও গেজেট প্রকাশ স্থগিত ও পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা বর্তমানে ইসির রয়েছে। এরই মধ্যে তা ব্যবহারও করা হয়েছে। সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন তার ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত নয় বা উপলব্ধি করতে পারছে না ভেবে তারা উদ্বিগ্ন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
উচ্চ আদালতের রায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে সুজন সম্পাদক বলেন, 'নূর হোসেন বনাম নজরুল ইসলাম মামলার রায় আইনে অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এর জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হওয়াটা আত্মঘাতীমূলক। আরপিও সংশোধনে ইসির প্রস্তাবটি অসম্পূর্ণ। কারণ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কমিশনের সংলাপকালে উত্থাপিত প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। হলফনামায় মিথ্যা তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপনকারীদের মনোনয়নপত্র বাতিলের সুস্পষ্ট বিধান আরপিওতে অন্তর্ভুক্ত করাসহ ১২টি প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি।