বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাংকি পক্স সংক্রমণকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরি সতর্কতা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত শনিবার ২৩ জুলাই ডাব্লিউএইচওর জরুরি কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেন সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস। তিনি বলেন, ‘মাংকি পক্সের সংক্রমণকে বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটি সারা বিশ্বের জন্য উদ্বেগের।
বৈশ্বিক স্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরি সতর্কতা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বোচ্চ সতর্কতা। এই মুহূর্তে করোনা ও পোলিও নির্মূল করার চলমান প্রচেষ্টার ক্ষেত্রেও সংস্থাটির একই সতর্কতা জারি রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেছেন, এখন পর্যন্ত পৃথিবীর মোট ৭৫টি দেশে মাংকি পক্সে আক্রান্ত হয়েছে ১৬ হাজারের বেশি মানুষ। সম্প্রতি এই রোগ ধরা পড়ে যুক্তরাষ্ট্রে, গত ৭ মে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে একই সঙ্গে কভিড-১৯ ও মাংকি পক্সে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক ব্যক্তি, যা খুবই বিরল ঘটনা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) এই সংক্রমণকে বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা বলে ঘোষণার পরদিনই ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে একজন রোগী শনাক্ত হয়েছে। ভারতে এ নিয়ে চতুর্থ ব্যক্তির শরীরে এই সংক্রমণ পাওয়া গেল। আতঙ্কের বিষয় হলো, প্রথম তিন ব্যক্তি বিদেশ থেকে ফিরলেও চতুর্থ ব্যক্তি সংক্রমিত হয়েছেন দেশে থেকেই। ফলে উদ্বেগের মাত্রা আরো বেড়েছে। এদিকে ভারতে মাংকি পক্স শনাক্ত হওয়ায় বাংলাদেশের জন্যও এটা অশনিসংকেত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যাতায়াত বেশি।
মাংকি পক্সের ৯৫ শতাংশ সংক্রমণের ঘটনা যৌন ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে হয়। এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’ সাময়িকীতে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়। মাংকি পক্স সংক্রান্ত এই ধরনের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় গবেষণা এটি।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেন লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল থেকে ২৪ জুনের মধ্যে বিশ্বের ১৬টি দেশে নিশ্চিত সংক্রমিত ৫২৮টি মাংকি পক্সের ঘটনার ওপর গবেষণা করেন।
গবেষণাপত্রের মুখ্য লেখক জন থর্নহিল এক বিবৃতিতে বলেন, সাধারণ অর্থে মাংকি পক্স যৌনবাহিত সংক্রমণ নয়। কিন্তু তা ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংসর্গের মাধ্যমে হতে পারে।
তুরস্কের এক নাগরিক গত ৭ জুন বাংলাদেশে আসেন। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ম মেনে তাঁকেও স্ক্রিনিং করা হয়। তাঁর শরীরে কিছু ফুসকুড়ি দেখা দেওয়ায় তৎক্ষণাৎ পাঠানো হয় হাসপাতালে। শরীরে ফুসকুড়ি মাংকি পক্সের অন্যতম লক্ষণ। পরে অবশ্য দেখা যায়, তাঁর শরীরে মাংকি পক্সের কোনো উপসর্গ নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরে নিশ্চিত করেছে যে তিনি মাংকি পক্সের রোগী নন এবং বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মাংকি পক্সের কোনো রোগী নেই।
মাংকি পক্স সংক্রমণের পেছনে রয়েছে মাংকি পক্স নামের ভাইরাস। এটি স্মলপক্স ভাইরাস শ্রেণির। করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই উত্তর আমেরিকা, ইউরোপসহ বেশ কয়েকটি দেশে মাংকি পক্সের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছে। স্মলপক্স নির্মূলের শেষ পর্যায়ে এসে ১৯৭০ সালের দিকে কঙ্গোতে মানবশরীরে এর প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে। ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যে এই ভাইরাসের খোঁজ মেলে। কিন্তু কখনো এবারের মতো রোগটা ছড়ায়নি।