যেসব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম, সেই সব আসনে ভোটারদের ভোট নিয়ে আগ্রহও থাকে কম। ফলে সব মিলিয়ে অন্তত শতাধিক আসনে ভোটকেন্দ্রে ভোটার আনাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আগামীকাল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অনেক অনিশ্চয়তা ও নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচন প্রস্তুতির উত্তাপ এরই মধ্যে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলো নিজেদের সাধ্যমতো প্রচারের কার্যক্রম শেষও করেছে। তবে প্রচার কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা পরস্পরের প্রতি যে ঘৃণা, বিদ্বেষ, আক্রমণ-প্রতি আক্রমণের ঘটনা ঘটিয়েছেন, দেশের সাধারণ মানুষ দর্শকের মতো তা উপভোগ করেছে। এবারের ব্যতিক্রমী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তাদের মহাজোটের দলগুলোই শুধু অংশগ্রহণ করছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই মনোনয়নবঞ্চিতদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি আওয়ামী লীগ থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী কে হবেন, সেটিও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ভোটের মাঠ শুরুতেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। দলীয় ও স্বতন্ত্র উভয়েই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হওয়ায় শক্তিমত্তায় কেউ কারও চেয়ে কম নন এবং একে অপরের রাজনৈতিক ও চারিত্রিক দুর্বলতা সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত আছেন। এখন একে অপরকে ঘায়েল করার জন্য সেগুলোই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ডিজিটাল আইনের ভয়ে এত দিন দেশের মানুষ ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের অপকর্ম, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের যে কথা সাহস করে বলতে পারেনি, সে কথাই এখন বিনা খরচায় ক্ষমতাসীন দলের লোকের মুখেই তা শুনতে পাচ্ছে। তাঁদের এরূপ নির্বাচনী বাহাসে দলীয় অনেক গোপন রাজনৈতিক তথ্যও জনসমক্ষে চলে এসেছে।
সম্প্রতি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একটি বক্তব্য ঢাকার প্রায় সব পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে। তিনি গাজীপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম রাসেলের এক নির্বাচনী সভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের উদ্দেশে কিছু বক্তব্য দেন। তিনি বলেছেন, ‘এইবার বুইঝা-শুইনাই নামছি চোর কেমনে আটকাইতে হয়। ২০১৪ ও ২০১৮-তে কামডা আমরাই কইরা দিছিলাম। এইবার হ্যারা কী করতে চাইতেছে, সব জানি। ৭ তারিখে প্রমাণ কইরা দিমু। এহন সমান সমান। এহন আর পুলিশও থাকব না। এহন আসেন, একটা ভোট চুরি কইরা দেহেন। এইডা ২০১৪ ও ২০১৮ না। এইডা ২০২৪ সাল।’
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রিটন বড়ুয়া আরও এককাঠি সরেস। তিনি চট্টগ্রাম-১৫ আসনের নৌকার প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘আপনাকে একটা কথা বলতে চাই, ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমরা ভোট ডাকাতি করেছি। সোজা কথা। আমরা এমনে আসি নাই। ২০১৮ সালেও আমরা ভোট ডাকাতি করেছি।’ রিটন বড়ুয়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মোতালেবের পক্ষে ভোট প্রচারণায় এই বক্তব্য দেন। এখানে গাজীপুরের জাহাঙ্গীর ও সাতকানিয়ার রিটন বড়ুয়ার বক্তব্যের মাধ্যমে বেশ কিছু সত্য তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে প্রহসনমূলক নির্বাচন নিয়ে দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল, আওয়ামী লীগ বরাবরই তা অস্বীকার করে এসেছে।