সেলফিতে সাকিব এবং একজন মুক্তিযোদ্ধার আক্ষেপ

সমকাল প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩:১৫

পৌষের মধ্য দুপুরে শীতের হালকা আবহ। মাগুরার শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। নৌকার প্রার্থী ক্রিটেকার সাকিব আল হাসানকে ঘিরে তুমুল উন্মাদনা। তরুণ-তরুণীরা তাঁকে নিয়ে একের পর এক সেলফি তুলছেন। কেউ আবার নিচ্ছিলেন অটোগ্রাফ। জটলা ছাড়িয়ে সামনে এগোনো প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছিল তাঁর। উপায়ান্তর না দেখেই কিনা অদ্ভুত এক কাণ্ড করে বসলেন সাকিব। ঘূর্ণি বলে অনেক বাঘা বাঘা ব্যাটারকে বোকা বানানোর অসংখ্য নজির তাঁর ক্যারিয়ারজুড়েই। সেলফিপ্রেমীদের কাছ থেকে আপাতত মুক্তি পেতে স্কুলের বারান্দার লোহার উঁচু গ্রিল লাফিয়ে টপকালেন তিনি। এমন দৃশ্য দেখে কেউ কেউ বললেন– ‘খেলোয়াড় বলে কথা!’ হাসির রোলও পড়ে গেল। সোজা রাস্তায় না গিয়ে গ্রিল টপকে ওই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মিলল তাঁর।


তারকা হয়ে রাজনীতির মাঠে নামলে সাধারণ মানুষ তাঁকে কাছ থেকে দেখতে চাইবে, কোনো স্মৃতির পটরেখা এঁকে রাখবে– এটাই স্বাভাবিক। তবে সাকিবের সঙ্গে ভক্তদের ইচ্ছাপূরণের আরেক পাশে নিভৃতে এক ভিন্ন গল্পও পাওয়া গেল। শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে দুইশ গজ দূরেই মাগুরার আরেকটি প্রতিষ্ঠান। সেটি হলো শ্রীপুর এমসি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়। নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে শুক্রবার ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলেন সাকিব। তাঁর আগমন উপলক্ষে এমসি পাইলট বিদ্যালয়ের মাঠে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়।


দুপুর গড়িয়ে বিকেল সাড়ে ৩টা। টোকেন নিয়ে একে একে প্রায় উপস্থিত লোকজন খাবারের প্যাকেট ও তাঁর সঙ্গে একটি ‘খাম’ (টোকেনধারীরা প্রত্যেকে ৫০০ টাকা সমেত খাম পেয়েছেন) নিয়ে যার যার মতো বাড়ি ফিরছিলেন। ৫০০ থেকে ৬০০ লোকের আয়োজন হলেও তখন অধিকাংশ চেয়ার ফাঁকা। প্যান্ডেলের পেছনের অংশে সত্তরোর্ধ্ব এক ব্যক্তি ও বয়স্ক এক নারী পাশাপাশি অসহায়ভাবে বসেছিলেন। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর জানা গেল তারা স্বামী-স্ত্রী। সত্তরোর্ধ্ব ব্যক্তি জানান তাঁর নাম এলাহি শেখ। স্ত্রীর নাম আলেয়া বেগম। হাতে থাকা লাঠি ও স্ত্রীর সহযোগিতা ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। বয়সের ভারে স্বামী-স্ত্রীর শরীরে চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে। তবে এলাহি বয়সের ভারে ন্যুব্জ হলেও কথায় দৃঢ়তার ছাপ স্পষ্ট। অসুস্থ স্বামীর হাতের ওপর যেভাবে আলেয়া হাত রেখে পাশাপাশি চেয়ারে বসে ছিলেন, তা যেন ভালোবাসার এক নৈসর্গিক দৃশ্য।


এলাহি হঠাৎ বলেন– ‘আমার বয়স ৭৫ পার হয়েছে। এক পা প্যারালাইজড। নিজে হাঁটতে চলতে পারি না। বউকে নিয়ে ভ্যান ভাড়া করে তিন কিলোমিটার দূরের বাড়ি থেকে নৌকার কর্মসূচিতে এলাম। ৩০ বছর ধরে শ্রীপুর ৪ নম্বর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। স্বাধীনতার আগে থেকে আওয়ামী লীগ করি। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। এখানে যাদের দেখছেন, তাদের অনেককে চোখের সামনে তরতর করে বড় নেতা হতে দেখেছি। সবাইকে খাবার দেওয়া হচ্ছে আর আমরা দু’জন এখনও অপেক্ষা করছি। হাঁটতে পারি না বলে স্টেজের সামনে যেতে পারছি না। একে-ওকে খাবার দেওয়ার কথা বললেও আমলেই নিচ্ছে না।


এ সময় আলেয়া বললেন– ‘লোকটা অসুস্থ। ক্ষুধা নিয়ে আর কত সময় অপেক্ষা করব। এই দেখেন এক্সরে রিপোর্টসহ চিকিৎসার কাগজপত্র। আজও সকালে ডাক্তার দেখাতে হয়েছে। দেখেন আপনারা কাউকে অনুরোধ করে দুই প্যাকেট খাবার জোগাড় করে আনতে পারেন কিনা। এত বলি বয়স হয়েছে, রাজনীতি থামাও। এক পা ওপারে চলে গেছে। কিন্তু কিছু শুনল না। আমাকে নিয়ে এখানে চলে এলো।’ এর পর কয়েক দফায় আয়োজকদের দৃষ্টি আকর্ষণের পর এলাহি ও তাঁর স্ত্রীর জন্য খাবার পাওয়া গেল। যখন খাবার হাতে তুলে দেওয়া হলো এলাহির মুখাবয়বে হালকা হাসির রেখা। চোখের কোনাও ছলছল করছিল। এমন দৃশ্য দেখে মনে হলো– এটা শুধু দুই প্যাকেট খাবার পাওয়া-না পাওয়ার বিষয় নয়, মুক্তিযোদ্ধা এলাহির জন্য আত্মসম্মানের প্রশ্ন। এলাহি বলেন, ‘কত মানুষকে সরকারের কাছ থেকে পাওয়া বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধার কার্ড দিয়েছি। এই জীবনে একটি পয়সা এদিক-ওদিক করিনি। অন্যায়ের সঙ্গে আপস তো প্রশ্নই আসে না।’ 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us