এবারের নির্বাচন অনেক কারণে গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। প্রথমত, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে যেসব দল সোচ্চার সেই রকম বিএনপিসহ অনেক দল এবারের নির্বাচন ঠেকানোর জন্য চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করতে পারেনি।
তখন আগে রাতের বেলায় ভোট করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে নির্বাচন এমনভাবে করতে চায়, যাতে ভোটাররা ভোট দিতে আগ্রহী হয়, তারা যেন কেন্দ্রে আসে। সে বিষয়টি চিন্তা করেই এবার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দলীয় লোকদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ারও সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। আবার সেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও এমন যে, যারা ভোটার টানতে পারবেন।
এখন নির্বাচনী নিয়ম অনুযায়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হলে একটি নির্দিষ্টসংখ্যক ভোটারের আগেই সমর্থন লাগবে। ভোটারের সংখ্যা অনুযায়ী খরচের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। এ জন্য একজন প্রার্থী নির্বাচন করতে গেলে এবার অনেক টাকা খরচ করতে হবে। যে প্রার্থীর ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা খরচ করার ক্ষমতা নেই, দল তাঁকে মনোনয়ন দিচ্ছে না। যাদের পেশিশক্তি আছে, অর্থ আছে, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। পেশিশক্তি না থাকলে তাদের মনোনয়ন দেয় না। সুতরাং, আগের মতো এবারও অর্থ ও পেশিশক্তি প্রধান বিষয় কিনা সেটি ছিল দেখার বিষয়। এবারও সেটিই হয়েছে।
অনেক দিন ধরে রাজনীতি ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেছে। একাদশ জাতীয় সংসদেও ৬০-৬৫ শতাংশ সংসদ সদস্য ছিলেন ব্যবসায়ী। তারা রাজনীতিবিদ নন। এবার দেখলাম, অন্য দলগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা অনেক কম। এ জন্য দল থেকে একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে, আবার একই দল থেকে আরেকজনকে প্রার্থী করা হচ্ছে। দু’জনই আওয়ামী লীগের প্রার্থী। আওয়ামী লীগের বাইরে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইলে তাঁকে কিছু বলা হবে না বলে জানানো হয়েছে। আওয়ামী লীগই বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচনে দাঁড়াতে উৎসাহ দিচ্ছে। এ রকম লোক প্রার্থী হলে একাধিক প্রার্থী থাকবে। তখন মানুষ ভোট দিতে যাবে। একাধিক প্রার্থী থাকলে নির্বাচনও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। এমন কৌশল নেওয়া হয়েছে, যাতে মানুষ ভোট দিতে আগ্রহ দেখায়। আওয়ামী লীগ চায় ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়তে হবে। সুতরাং, দলের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে এ কৌশল নেওয়া হয়েছে।