ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি নাকি নয়া ইতিহাস

আজকের পত্রিকা অরুণ কর্মকার প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৮

এমন একটি কথা প্রচলিত আছে যে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয় না; অর্থাৎ ইতিহাস কখনো হুবহু একইভাবে ফিরে আসে না। তবে স্থান-কাল-পরিস্থিতিভেদে ইতিহাসের যতটা পুনঃমঞ্চায়ন হলে পুনরাবৃত্তি বলা যায়, সেটা বোধ হয় আমরা দেখতে যাচ্ছি। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি তেমনটাই আভাস দিচ্ছে।


সেই ইতিহাস দূরবর্তী কোনো ঘটনাকেন্দ্রিক নয় বলে আমরা তা ভালোভাবেই স্মরণ করতে পারি। আমরা মনে করে দেখতে পারি, ২০১৪ এবং বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি ও ঘটনাবলি। এবারও কি বিএনপি নির্বাচনের বাইরেই থাকবে? তাদের দাবি তো কিছুই পূরণ হয়নি। এক দফার আন্দোলনও এখন নির্বাচন হতে না দেওয়ার হুমকিতে পরিণত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। তবে জনগণের বয়ানে যদি তা হয়, জনগণ যদি তেমন কিছু করে তাহলে সৃষ্টি হতে পারে নয়া ইতিহাস।


তবে সেই সম্ভাবনা কম বলেই মনে হয়। কারণ নির্বাচনের যে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে তার গতি রোধ করে উল্টোযাত্রায় বাধ্য করানো অনেক বড় শক্তি-সামর্থ্যের ব্যাপার। অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁরা দলীয় অ্যাকটিভিস্ট, তাঁদের কারও কারও মধ্যে এমন একটা বিশ্বাস রয়েছে বলেও লক্ষ করা যায়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তাঁদেরই কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন, চূড়ান্ত সময় ঘনিয়ে এসেছে।


অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো বলে। তবে একমাত্র রাজনৈতিক হত্যা এবং ক্যুর মতো গভীরতর এবং যুগান্তকারী (নেতিবাচক অর্থে) কোনো ষড়যন্ত্রের বাস্তবায়ন ছাড়া তাঁদের এই বিশ্বাসের বাস্তব কোনো ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না।


অন্যদিকে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির বিষয়টি স্পষ্ট। যেমন বিএনপি এবং তাদের আন্দোলনের সঙ্গী সমমনা দলগুলোর দাবি-দাওয়াকে কোনো রকম পাত্তা না দিয়েই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এখন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ীই কাজ করে যাবে। আওয়ামী লীগ ও তাদের সঙ্গে জোটভুক্ত দলগুলো দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। জাতীয় পার্টি বিএনপির অনুগামী হবে—এমনটা ভাবার কোনো কারণ দেখি না। তবে তাদের কিছু ইস্যু আছে। সেগুলোর ফয়সালা করে নিয়ে নির্বাচনের ট্রেনে উঠতে চায়। তৃণমূল বিএনপিও নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। তারা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার কথা বলেছে। পাশাপাশি বিএনপির আরও কিছু নেতা নির্বাচনে শামিল হবেন বলে বিভিন্ন মিডিয়ার সূত্রে জানা গেছে।


ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির আরও একটি উদাহরণ হলো নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিএনপির হুমকির পাশাপাশি তাদের সমমনা এবং অনুগামী দলগুলোর হরতাল আহ্বান করা। অবরোধ তো আছেই। তারা সবাই মিলে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস, ট্রেন এবং অন্যান্য যানবাহনে আগুন লাগানো শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৯ ও ২০ নভেম্বর ৪৮ ঘণ্টার একটানা হরতাল ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর হয়তো আরও বড় ধরনের লাগাতার হরতালের কর্মসূচি দেবে তারা। আগুন লাগানোসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনাবলিও বাড়তে থাকবে। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে বাড়তে থাকবে পুলিশের হাতে আটক গ্রেপ্তার মামলা-মোকদ্দমা এবং সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান। সরকারি দল এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে রাজপথে অবস্থান অব্যাহত রাখবে। এসব কর্মকাণ্ড আমাদের অদূর অতীতের ইতিহাসের অনুরূপই বটে।


এত সব বিঘ্ন অতিক্রম করে বিএনপি এবং তার অনুগামীদের পক্ষে নির্বাচন হতে না দেওয়া অসম্ভবেরই নামান্তর। যেমন হয়েছে অতীতে। এই হিসাবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটার সম্ভাবনাই এখন দৃশ্যমান। নয়া ইতিহাস সৃষ্টি নয়। নয়া ইতিহাস সৃষ্টির ক্ষীণতম যে সুযোগটুকু ছিল তা-ও কাজে লাগানো হয়নি কিংবা কাজে লাগানো যায়নি রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবে অথবা দম্ভের কারণে। সেই সুযোগটুকু নেওয়ার একমাত্র উপায় ছিল সংলাপ। শর্তহীন সংলাপ।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us