রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ-সংলগ্ন কবরস্থানে প্রতিটি কবরে একটি করে নামফলক আছে। তাতে দাফন করা মরদেহের নাম-পরিচয় লেখা রয়েছে। কিন্তু কবরস্থানের ৪ নম্বর ব্লকে ওই রকম কোনো নামফলক নেই। একটু পরপর ছোট ছোট বাঁশ পুঁতে রাখা আছে। কেউ বলে না দিলে বোঝার উপায় নেই যে সেগুলো ‘বেওয়ারিশ’ লাশের কবর।
সারি সারি কবরের দুই পাশে সরু হাঁটাপথ। মাঝখানের জায়গাটি সবুজ ঘাসে ছেয়ে আছে। ফুটেছে ঘাসফুল। সেখানে একটি সাইনবোর্ডে চোখ আটকে গেল। তাতে লেখা, এই কবরগুলোতে যাঁরা চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন, তাঁদের সবার পিতৃপরিচয় ছিল, ছিল তাঁদের পরিবার। কিন্তু স্বৈরাচারী সরকারের কারণে তাঁরা বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হয়েছেন। তাঁরা তো বেওয়ারিশ ছিলেন না। বোঝা গেল, এগুলোর মধ্যে জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের কবরও রয়েছে। তাঁদের ‘বেওয়ারিশ’ হিসেবে সেখানে সমাহিত করা হয়েছে।
বেওয়ারিশ লাশগুলো জুলাই-আগস্টে দাফন করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম, যারা নাম-পরিচয় না জানা মরদেহ দাফন করে। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, রায়েরবাজার কবরস্থানে তারা জুলাইয়ে ৮০ জনের ও আগস্টে ৩৪ জনের মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা অনেকেই আন্দোলনে নিহত। কিন্তু সংখ্যাটি কত, তা অজানা।
আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম জানিয়েছে, তারা জানুয়ারি থেকে নভেম্বর সময়ে ৫১৫টি মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেছে। মাসে গড়ে ৪৭টি। তবে জুলাই মাসে সংখ্যাটি বেড়ে ৮০ হয়ে যায়। আগস্টে তারা দাফন করেছে ৩৪টি মরদেহ। যদিও ওই মাসের শুরু থেকে ১১ দিন অস্থিরতার মধ্যে তাদের কাছে কোনো লাশ দাফনের অনুরোধ আসেনি।
কারা আন্দোলনে গিয়ে নিহত হয়েছেন, তাঁদের পরিচয় কী—এসব জানতে তদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষা দরকার। কিন্তু সে উদ্যোগের গতি ধীর। ফলে রায়েরবাজারে দাফন করা আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। পরিবারগুলো স্বজনের কবর খুঁজে পাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণও পাচ্ছে না।