অনেক জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন নিয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র দফায় দফায় সরকার ও বিরোধী দলগুলোকে শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। সবশেষ ১৩ নভেম্বর ডোনাল্ড লু তিনটি রাজনৈতিক দলকে এক অভিন্ন বার্তায় শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। সেই একই চিঠির মাধ্যমে দলগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির কথাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। শর্তহীন সংলাপের সঙ্গে ভিসানীতির কথা মনে করিয়ে দেওয়া একটি সতর্কবার্তা। রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় ব্যর্থ হলে তাদের ভিসানীতি আরও ব্যাপকভাবে প্রয়োগ হতে পারে, এটি সেই বার্তাই বহন করে।
মার্কিন ভিসানীতির পর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আসবে কিনা সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। যদিও পিটার হাস আজ (১৫ নভেম্বর) আইএমএফের বাংলাদেশ প্রধান জয়েন্দু দে, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেকসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ ভিসানীতির মূল উদ্দেশ্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। সুষ্ঠু নির্বাচনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের হলেও সরকারের ভূমিকা অনেক বড়। সরকারই তার অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনা করে। আওয়ামী লীগ সরকার বর্তমান সংবিধানের অধীনে নির্বাচন করতে চায়; কিন্তু তারা তাদের দ্বারা পরিবর্তিত বর্তমান সংবিধানের অধীনে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন করেছে। সে দুটি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হলেও আন্তর্জাতিকভাবে সে দুটি নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। অর্থাৎ সরকার তথা বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোর অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, তা সরকার নিজেই দুবার প্রমাণ করেছে। কাজেই, আমেরিকা যদি মনে করত যে, সংবিধানের অধীনে এ সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব, তাহলে তাদের নতুন ভিসানীতি প্রণয়ন করার প্রয়োজন হতো না। পিটার হাসেরও এত দৌড়ঝাঁপ করা লাগত না। কাজেই, সংবিধানের বাইরে গিয়ে সমঝোতার পথ সরকারকেই রচনা করতে হবে। সংবিধান রক্ষা করা যেমন সরকারের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব, সুষ্ঠু নির্বাচন করাও তেমনি।
তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান দায় সরকারের হলেও বিএনপির দায়ও কম নয়। বিএনপিকেও সংলাপের ব্যাপারে আগ্রহী হতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনে বিএনপির আন্তরিক সহযোগিতা ছিল কিনা সেটাও যাচাই করবে যুক্তরাষ্ট্র। না হলে ভিসানীতি তাদের ওপরও প্রয়োগ হতে পারে।