পদ্মার ঢেউয়ের চেয়ে বাঙালির আবেগের ঢেউ আরও ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক। পদ্মা সেতু ঘিরে ওই আবেগ আছড়ে পড়ছে দেশজুড়ে। এত বড় স্বপ্ন জয়ের পর যদি আবেগই কাজ না করে, তা হলে ওই জয়কে পানসে ও ম্যাড়মেড়ে মনে হবে।
পদ্মা সেতু বাঙালির আবেগের সেতু। পদ্মার চেয়ে বড় নদীর ওপর বড় সেতু পৃথিবীতে আরও আছে। কিন্তু এই সেতুর যে ইতিহাস, তা আগামী প্রজন্মের জন্য পাঠ্যবইয়ে জায়গা পাওয়া উচিত। স্টিল-কংক্রিট-রড-সিমেন্ট-বালুতে গড়া শুধু একটি অবকাঠামো নয়, এই সেতু বাঙালি জাতির আত্মমর্যাদা-সার্মথ্য আর অহঙ্কারের প্রতীক! উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী তেমন একটি বার্তাই দিয়েছেন। প্রমত্ত-খরস্রােতা-সর্বনাশা পদ্মার ওপর সেতু শুধু নদীর দুই কিনারকে এক করেছে, তা নয়। এই সেতু শুধু আগামীর অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা বলছে, তাও নয়। এই সেতু বাঙালিকে পেছন ফিরে দেখতে বলছে, ইতিহাসের পাতা ওল্টাতে বলছে। জাতি হিসেবে আমাদের একটি খারাপ অভ্যাস আছে। আমরা ইতিহাসের শুধু পছন্দের অংশটুকু নিয়ে নাড়াচাড়া করি। নিজেদের মতো ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করি। ইতিহাসবোধহীন জাতি হিসেবে আমরা বহুবার এই প্রমাণ রখেছি। এই ইতিহাসবোধহীন অগভীর মানুষের মধ্যে শুভবুদ্ধির চর্চা বৃদ্ধি করা এখন জরুরি। বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হলে এর পক্ষে অনেক কিছু করা সম্ভব। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এর বড় প্রমাণ। একটা স্বাধীন স্বদেশ পাওয়ার স্বপ্নে সেদিনও বাঙালির ভাবাবেগ তুঙ্গে ছিল। একই সঙ্গে ওই স্বপ্নকে নষ্ট করতে কতিপয় মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। অনেক মানুষ অপশক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। জাতিগত নয়, ব্যক্তিস্বার্থে। পদ্মা সেতুর ইতিহাসের পাতাতেও তেমন কিছু লেখা থাকবে। সেগুলো জানা না থাকলে পরের প্রজন্ম স্বপ্ন দেখতে পারবে না। সামনের দিকে এগিয়ে চলার সাহস পাবে না। গত ২৫ জুন এই বাংলায় জন্ম নেওয়া হাজারো শিশু ঠিক ২৫ বছর পর পদ্মা সেতুর ইতিহাস পড়ে মুগ্ধ বিস্ময়ে হয়তো ভাববে- এও সম্ভব! ইতিহাসবিমুখতায় স্বাধীনতার একান্ন বছর পরও একাধিক প্রজন্ম বুঝতে পারে না, এ দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতায় বিদেশিদের সঙ্গে এ দেশের অনেক মানুষও সক্রিয় ছিল!