জামায়াত থেকে সরে এসে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন ‘জামায়াতেরই নতুন সংস্করণ’ বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা মনে করেন, এটা জামায়াতের রাজনৈতিক আদর্শ টিকিয়ে রাখার নতুন কৌশল। গত শনিবার (০২ মে) ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। এই দলটিকে গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এবং অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতারা। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসজনিত দুর্যোগের মধ্যে এই দলটি আত্মপ্রকাশ করলো। এই দলের মূল উদ্যোক্তা জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি মুজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি দলটির সদস্য সচিব। আহ্বায়ক হয়েছেন জামায়াত ঘরানার বলে পরিচিত সাবেক সচিব সোলায়মান চৌধুরী। রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি হয়েছে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতাসহ বিভিন্ন কারণে জামায়াত যেহেতু দেশের রাজনীতিতে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না, সে কারণে দলটি থেকে কিছু লোক বেরিয়ে এসে নিজেদের আদর্শ টিকিয়ে রাখতেই নতুন দলের জন্ম দিয়েছে বলে মনে করছেন অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা। ওই রাজনৈতিক নেতারা জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের সঙ্গে দলটির ছাত্র সংগঠন ‘ইসলামী ছাত্র সংঘ’ গণহত্যাসহ মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালায়। স্বাধীনতার পর সংগঠনের নাম পাল্টে ‘ইসলামী ছাত্র শিবির’ নামে নতুন সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বে বিভিন্ন দেশেও জামায়াতপন্থি মতাদর্শের রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের এ ধরনের নাম পরিবর্তন করে আত্মপ্রকাশের নজির রয়েছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘নতুন পাত্রে পুরনো মদ। এটা জামায়াতের নতুন সংস্করণ। জামায়াত নেতিবাচক রাজনীতি ও স্বাধীনতা বিরোধিতার কারণে জনগণের রোষানলে আছে। সেখান থেকে সরে এসে আত্মরক্ষার জন্য নতুন রাজনৈতিক দল। এটা জামায়াতের রাজনৈতিক কৌশল ছাড়া অন্য কিছু ভাবার কোনো সুযোগ নেই। এই মুহূর্তেই এদের প্রতিরোধ করা উচিত।’ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ দেশের এই দুর্যোগের মুহূর্তে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন এমন কি জরুরি ছিলো। কোনো মহৎ উদ্দেশ্যে এই দুর্যোগের সময় রাজনৈতিক দল হতে পারে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই।’ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘সাপ যতই চামড়া বদলাক বিষ ঠিকই থাকে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি যতই চেহারা বদলাক না কেন চরিত্র বদলায় না। স্বাধীনতার পক্ষের সব শক্তিকে এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এদের নিয়ে কেউ যেনো নতুন খেলা খেলতে না পারে।’ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই দল যারা করেছেন তারা কোন ঘরানার রাজনীতি থেকে এসেছেন, তাদের অতীত কর্মকাণ্ডের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। নতুন কিছু এলেই যে ভালো হবে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। তাদের অতীত কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলেই উদ্দেশ্য বোঝা যাবে।’