ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ
বাংলাদেশের ১৮তম রাষ্ট্রপতি ও তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা
বাংলাদেশের ১৮তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ। তিনি ২০০২ সালের ৬ সেপ্টম্বর বিএনপির হয়ে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত র্দীঘ ৭ বছর ৫ মাস দায়িত্ব পালন করেন। তার স্থলাভিষিক্ত হন সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম মো. জিল্লুর রহমান। ড. ইয়াজউদ্দিনের পূর্বসূরী ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জমির উদ্দিন সরকার। ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৬ সালের ২৯ অক্টোবর তিনি এ পদে অধিষ্ঠিত হবার জন্য শপথ গ্রহণ করেন। পরে জরুরি আইন জারি করে ২০০৭ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি এ পদ ছেড়ে দেন। এ পদে তার স্থলাভিষিক্ত হন বিশ্বব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফখরউদ্দিন আহমদ।
ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ১৯৩১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মুন্সীগঞ্জ জেলার নারায়ণগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মৌলভি মুহাম্মদ ইব্রাহিম। অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের স্ত্রী অধ্যাপিকা আনোয়ারা বেগম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষিকা। ১৯৪৮ সালে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ মুন্সীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক এবং ১৯৫০ সালে মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজ থেকে ইন্টারমেডিয়ট পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫০ ও ১৯৫২ সালে যথাক্রমে বিএসসি ও এমএসসি পাস করেন। যুক্তরাষ্ট্রের উইসকোন্সিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে যথাক্রমে এমএস ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ২০০২ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি ২০০৬ সালের ২৯ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০৭ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি এ পদ ত্যাগ করেন এবং তার পরদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফখরউদ্দি আহমদকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করেন। এছাড়াও অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। তখন তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৬৪ সালে সহযোগী অধ্যাপক ও ১৯৭৩ সালে অধ্যাপক হন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের প্রভোস্ট ছিলেন। অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ১৯৬৮-৬৯ ও ১৯৭৬-৭৯-এ দুই মেয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ছিলেন। তিনি ১৯৮৯ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত পর পর দুই বার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন নির্বাচিত হন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল এবং বোর্ড অব অ্যাডভান্স স্টাডিজের সদস্য ছিলেন।
১৯৯১-৯৩ সময়ে তিনি পাবলিক সার্ভিস কমিশন ও ১৯৯৫-৯৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেবার আগ পর্যন্ত তিনি স্টেট ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছিলেন। অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহমেদ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৪৯তম সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন। সেখানে তিনি প্যালেস্টাইন শরণার্থী এবং বিশ্ব-বাণিজ্য ও উন্নয়ন নিয়েও কথা বলেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম হল ফেডারেশন অব ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সম্মিলিত শিক্ষক আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন।
এছাড়া তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক মৃত্তিকা বিজ্ঞানী সমিতি, ভারতীয় মৃত্তিকা বিজ্ঞানী সমিতি, বাংলাদেশ মৃত্তিকা বিজ্ঞান সমিতি এবং এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য ছিলেন। অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের দেশ ও বিদেশ মোট প্রকাশনার সংখ্যা ১২৫টি। তিনি ধান গাছের ওপর লবণাক্ততার প্রভাব ও বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে উচ্চ ফলনশীল ধান নিয়েও গবেষণা করেন। তিনি উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান মাটিতে জমা করে রাখা এবং তা প্রয়োজন মতো উদ্ভিদকে সরবরাহ করার পদ্ধতির ওপর সফল গবেষণা চালান। এ কাজের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে তিনি ব্যাপক সাড়া জাগান। অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ তার শিক্ষকতা জীবনে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৩ সালে যুক্তরাজ্যের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৮৪ সালে বার্লিনে জার্মান টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও জার্মানের গ্যাটিঞ্জেন বিশ্ববিদ্যালয়েও কর্মরত ছিলেন।
অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ইব্রাহিম মেমোরিয়াল গোল্ড মেডেল (১৯৮৭-৮৮), শ্রীজ্ঞান অতীশ দিপঙ্কর গোল্ড মেডেল (১৯৯০), ক্রেস্ট (১৯৯১) এবং শিক্ষার জন্য একুশে পদক (১৯৯৫) লাভ করেন।
Join Priyo to discover more contents
আরো কন্টেন্ট দেখতে প্রিয়তে যোগ দিন