জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যে ভাষণ দিয়েছেন, আমার একজন বন্ধু তার সারসংক্ষেপ করেছেন—আলোচনার টেবিলে আসতে রাশিয়াকে বাধ্য করুন; ইউক্রেনের যেসব ভূখণ্ড রাশিয়া দখল করে নিয়েছে, সেগুলো ফিরিয়ে নিন; পুতিন ও তাঁর ক্রনিদের যুদ্ধাপরাধের বিচার করুন; ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র ও অর্থসহায়তা দিন।
আমি মনে করি, এভাবে সারসংক্ষেপ করা যৌক্তিক। কিন্তু জেলেনস্কির ভাষণের প্রকৃত বক্তব্য এটা নয়। প্রকৃতপক্ষে জেলেনস্কি এমন চিন্তা করছেন যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর কাছ থেকে এই প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিতে পারবেন যে তারা ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে বিমান শক্তি ও সেনা পাঠাবে।
এ কারণেই জেলেনস্কি পেনসিলভানিয়াসহ ভোটের ফলাফল তৈরির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে `কমলা হ্যারিসের পক্ষে প্রচারণা' চালাচ্ছেন। এর কারণ হলো, তিনি ভালো করেই জানেন, নভেম্বরের নির্বাচনে হ্যারিস জিতলেই কেবল ইউক্রেনে মার্কিন সেনা মোতায়েন করার সম্ভাবনা আছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, রাশিয়াকে তাহলে কীভাবে আলোচনার টেবিলে বসানো হবে? রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা করার জন্য ইউক্রেনকে প্রচুর পরিমাণে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের জোগান দেওয়া, যাতে করে রাশিয়ার অবকাঠামোগুলো ধ্বংস করা যায় এবং বেসামরিক মানুষজন হতাহত হয়।
এই যুক্তির পেছনে আরেকটি ভাষ্য লুকিয়ে আছে। সেটা হলো, পুতিন খুব দুর্বল ও অজনপ্রিয়। রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়াও ভঙ্গুর। এ অবস্থায় পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হয়, তাহলে পুতিনকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পথ খুলে যাবে।
জেলেনস্কি, ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান কাইরিলো বুদানভ এবং যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কতিপয় বন্ধু এই তত্ত্ব প্রচার করছেন। ‘পুতিনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে’-এর কয়েক দিনের মাথায় ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ভাগনার প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিন নিহত হওয়ার পর এই তত্ত্ব তাদের মাথায় আসে।
প্রিগোশিন ছিলেন ভাগনার গ্রুপের দৃশ্যমান নেতা। অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে শতকোটিপতি হওয়া প্রিগোশিন ছিলেন পুতিনের একজন ‘বন্ধু’। তিনি অসন্তুষ্ট একদল সেনা নিয়ে মস্কোর দিকে যাত্রা শুরু করেছিলেন। তাঁর দাবি ছিল, বাখমুত যুদ্ধের সময় তাঁর বাহিনীকে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী যথেষ্ট পরিমাণ গোলাবারুদ দেয়নি। এ কারণে বাখমুত যুদ্ধে ভাগনার বাহিনীর শত শত সেনা নিহত হয়েছেন।
রাশিয়ার রোস্তভ অন দনে প্রিগোশিনের বাহিনীকে স্বাগত জানানো হয়েছিল। বাখমুত যুদ্ধে বিজয়ের কারণে তাঁরা ছিলেন জাতীয় বীর। মস্কোর দিকে বাহিনী নিয়ে যেতে চাওয়ায় পুতিন প্রিগোশিন ও তাঁর বাহিনীকে ধ্বংস করে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় একটা চুক্তি হওয়ায়, শেষ পর্যন্ত পুতিন তাঁর অবস্থান থেকে সরে আসেন।
কিন্তু প্রিগোশিন ও তাঁর লোকেরা সেই চুক্তি রক্ষা করেনি। শেষে মস্কোর খুব কাছে একটা বিমান বিধ্বস্ত হয়ে তিনি মারা যান।
পুতিনকে আর যে ব্যক্তি উৎখাত করতে চেয়েছিলেন, তিনি হলেন অ্যালেক্সি নাভালনি। ২০১৩ সালে মস্কোর মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন নাভালনি, ভোট পেয়েছিলেন ২৭ দমিক ২ শতাংশ। নাভালনির শরীরে নার্ভ এজেন্ট নভিচক প্রয়োগ করা হয়। রাশিয়ার বাইরে তিনি চিকিৎসা নেন।