ইউক্রেনকে রাশিয়ার সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে পশ্চিমা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের অনুমতি দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাও তাঁর শাসনের শেষ সময়ে এসে। এ সিদ্ধান্ত ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ন্যাটো অংশীদারদের ওপর রাশিয়ার প্রতিশোধমূলক নাশকতা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করল।
ভ্লাদিমির পুতিন বেশ আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন, ইউক্রেন যদি মার্কিন, ব্রিটিশ ও ফরাসিদের ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার আরও বাড়িয়ে দেয়, তাহলে তা মস্কোর বিরুদ্ধে ন্যাটোর যুদ্ধ হিসেবে দেখা হবে। এর ফল হবে বিপর্যয়কর। যুদ্ধ এখন সেদিকেই মোড় নিল।
জি-৭ নেতাদের একটি যৌথ বিবৃতিতে ‘যত দিন সময় লাগে ইউক্রেনের প্রতি অটুট সমর্থন’-এর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে যুদ্ধের হাজার দিন পূর্তিতে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ব্রাজিলে এ সপ্তাহে একই প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। শিগগিরই এ প্রতিশ্রুতির পরীক্ষা হয়ে যাবে বলে মনে হয়।
স্থলপথে রাশিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরে দ্বন্দ্ব আছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আবার নির্বাচিত হওয়াও আশার কথা শোনাচ্ছে না। এই যুদ্ধ সামরিক ও কূটনৈতিকভাবে এক জটিল সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছে। রাশিয়া এখন আছে সুবিধাজনক অবস্থায়। ইউক্রেনেরও হাল ছাড়ার উপায় নেই।
জেলেনস্কির কয়েক মাসব্যাপী লাগাতার চাপ সত্ত্বেও বাইডেন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিলেন দেরিতে। ইউক্রেন তার পিঠের পেছনে এক হাত বেঁধে লড়াই করছে। রুশ বিমানঘাঁটি ও সামরিক ঘাঁটি ইউক্রেনের হামলা করার আওতার বাইরে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই নতুন অস্ত্র সরবরাহে ছিল অতি সতর্ক। সাম্প্রতিক মার্কিন গোয়েন্দা মূল্যায়নে সেই দ্বিধা আরও জোরদার হয়েছে বলে জানা গেছে। সেই গোয়েন্দা প্রতিবেদন সতর্ক করেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা ব্যবহার করলে পুতিনের পাল্টা জবাব দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
পোল্যান্ড ও অন্য ‘ফ্রন্টলাইন’ ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক চলছে। তবু ইউরোপীয় সামরিক ঘাঁটি বা অঞ্চলের বিরুদ্ধে সরাসরি রুশ সশস্ত্র প্রতিশোধের সম্ভাবনা কম বলে মনে হচ্ছে।
গোয়েন্দা অনুসন্ধানে বরং জানানো হয়েছে, রাশিয়া গোপন নাশকতা বাড়াতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তারা সাইবার, তথ্যযুদ্ধ ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে বলে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। এমনি করে রাশিয়া পূর্ব-পশ্চিম সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়াতে পারবে। আবার জার্মানির ওলাফ শলৎজের মতো দ্বিধান্বিত ন্যাটো সদস্যদের ওপর নিজের প্রভাবও বজায় রাখতে পারবে।
এস্তোনিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং সদ্য মনোনীত ইইউর পররাষ্ট্রনীতির প্রধান কাজা ক্যালাস বলেছেন, মস্কো ইউরোপের ওপর ‘ছায়াযুদ্ধ’ চালাচ্ছে। নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গাহর স্টোর সতর্ক করেছেন, রাশিয়া শক্তি উৎপাদনকারী ও অস্ত্র কারখানাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে। ক্যালাস মত দিচ্ছেন, ইউরোপের একটি সমন্বিত পদ্ধতির প্রয়োজন, ‘আমাদের মাটিতে ওদের কত দূর যেতে দেব?’