৭ জানুয়ারির দ্বাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে প্রযুক্তির যত ব্যবহার, পাশাপাশি অপব্যবহারও থেমে নেই। প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে আমরা একটি গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্ব গ্রামে বসবাস করছি। চলমান চতুর্থ শিল্পের মধ্য থেকে বিশ্ব যখন পঞ্চম শিল্পের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে, তখন বাংলাদেশই–বা কেন পিছিয়ে থাকবে? ডিজিটাল গণ্ডি পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে যখন বাংলাদেশ হাঁটছে, তখন সেই জনপ্রতিনিধি, ভোটার বা জনসাধারণ বেছে নেবেন প্রযুক্তির মাধ্যম, এটাই স্বাভাবিক।
নির্বাচন কমিশন এবার অনলাইনে ও অ্যাপসের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র দাখিল, প্রত্যাহার, ভোটের তথ্য পাওয়ার জন্য নির্বাচনী ম্যানেজমেন্ট অ্যাপস তৈরি করেছে। এমনকি ভোটাররা কোন কেন্দ্রে ভোট দেবেন, তাঁর ভোটার নম্বর কত, সেই তথ্য পেতে পারবেন নির্বাচনী অ্যাপসের মাধ্যমে। এই অ্যাপস তৈরি করতে নির্বাচন কমিশন খরচ করেছে প্রায় ২১ কোটি টাকা। এবার নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৮৯৬।
নির্বাচনের আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রায় সব প্রার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব ছিলেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে প্রচার বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিগত সব নির্বাচনকে হার মানিয়েছে। নিজেদের পক্ষে প্রচার যেমন রয়েছে, তেমনি সাইবার বুলিং ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইমো নির্বাচনের প্রচারে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ‘ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস’ বা ‘ভ্যাস’। এই অপারেটরের মাধ্যমে ভোটারদের সরাসরি ৩০ সেকেন্ডের ভয়েস কল দিচ্ছেন প্রার্থীরা। যেখানে প্রার্থীরা একটি নম্বর থেকে ভোট ও দোয়া চাইছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বুস্টিং করছেন, খরচ করছেন কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার।
নির্বাচনের ব্যয়ভার এবং আচরণবিধির মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রচারপত্রের ব্যয় এবং ভয়েস কলের মাধ্যমে ভোট চাওয়ার কোনোটাই না থাকলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা কিন্তু তা করছেন। নির্বাচনে আচরণবিধি লক্ষ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের বিচারিক কার্যক্রম এবং মনিটরিং টিম থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিষয়ে মনিটরিংয়ের জন্য নির্বাচন কমিশনে আলাদা কোনো ইউনিট নেই।
২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংসদে পাস হওয়ার পর সরকার ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর গঠন করে ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি। এরপর ২০২৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সংসদে সাইবার নিরাপত্তা আইন পাস হলে সেই আইনে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি গঠনের কথা বলা হয়। তা ছাড়া রয়েছে ডিবির সাইবার ক্রাইম ইউনিট, র্যাবের পক্ষ থেকে গঠন করা হয়েছে সাইবার পেট্রোলিং।
গত ২৮ অক্টোবর সাবেক মন্ত্রী (ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়) মোস্তফা জব্বারকে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি দ্বাদশ নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার সাইবার বুলিং বন্ধের পরামর্শ দিলে তাঁরা এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু আমরা লক্ষ করলাম, সাইবার বুলিং ও অপপ্রচার ব্যাপক হারে চলছে। যদিও আমাদের টেলিযোগাযোগ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারের আরেকটি বড় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এনটিএমসির ইন্টেলিজেন্স। এই প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সব মোবাইল অপারেটরের ভয়েস এবং ডেটা, নির্বাচন কমিশন ডেটাবেইস, পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন ডেটাবেইস, জন্মনিবন্ধন ডেটাবেইস, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ডেটাবেইস, র্যাব ডেটাবেইস (ক্রিমিনাল ডেটাবেইস, জেল ইনমেট ডেটাবেইস) এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করেছে। যার মাধ্যমে আইনপ্রয়োগকারী, গোয়েন্দা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা এবং হজ নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ তাদের প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের তথ্য যাচাই-বাছাই করতে পারছে।