নির্বাচনের দিনক্ষণ না পিছিয়েও শুধু মনোনয়নপত্র জমাদানের তারিখ পেছানো হতে পারে। নতুন করে তপশিল ঘোষণাতেও বাধা নেই। বিএনপি নির্বাচনে আসতে চাইলে তেমন ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও বলা হয়েছে, তারা নির্বাচনে আসুক। বিএনপি চাইলেও এখন সুস্থিরভাবে নির্বাচন করতে পারবে কিনা, সে প্রশ্ন অবশ্য রয়েছে। তার নেতারা কারাগারে, নয়তো আত্মগোপনে। চলছে গ্রেপ্তার অভিযান। বহু কর্মী বাসায় থাকতে পারছে না। হচ্ছে মামলা। পুরোনো মামলায় হয়ে যাচ্ছে সাজা। এখন তাদের পক্ষে উপযুক্ত প্রার্থী দেওয়াও কঠিন। বিএনপি আন্দোলন থামিয়ে নির্বাচনে আসার ঘোষণা দিলে হয়তো পরিস্থিতি কিছুটা বদলাবে। নির্বাচনের আগেই সেটা আবার হয়ে উঠবে সরকারের বড় বিজয়।
বিএনপির নির্বাচনে আসার সম্ভাবনা অবশ্য দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় মনোনয়নপত্র জমাদানের তারিখ পেছানো জরুরি হয়ে উঠতে পারে অন্য যারা ক্রমে নির্বাচনে আসার ঘোষণা দিচ্ছে, তাদের জন্য। বিএনপিকে বাইরে রেখে যে নির্বাচন হতে চলেছে, সেটাকে ‘অংশগ্রহণমূলক’ দেখানোর চেষ্টা রয়েছে সরকারের। দেখানোর চেষ্টাটা আসলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমাদের, যারা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’-এর প্রশ্ন থেকে নড়ছে না। সরকার তাদের দেখাতে চায়, বিএনপি না এলেও অনেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এ ‘প্রকল্প’ বাস্তবায়নে মনোনয়নপত্র জমাদানের তারিখ পেছানো হয়তো জরুরি।
নিশ্চয় ভালো হতো বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তপশিল পেছানো হলে। এটা কোনোমতেই ঘটবে না, তা অবশ্য নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। নির্বাচন ঘিরে নানা সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে। ২৮ অক্টোবর সৃষ্ট পরিস্থিতিতেও সেসব বন্ধ হয়নি। ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হতে হবে অবশ্য। নইলে ‘সাংবিধানিক শূন্যতা’র সৃষ্টি হবে– এটা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে ইসি। নির্বাচন ঘিরে দেশের সিংহভাগ মানুষের প্রত্যাশাও কম জরুরি নয়। পশ্চিমাদের প্রত্যাশাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাদের সক্রিয়তাও লক্ষণীয়; বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের নজিরবিহীন ভূমিকা।
যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত চেয়েছিল, আরও পরে তপশিল ঘোষণা করা হোক। তখন তাদের ‘নিঃশর্ত সংলাপ’-এর লিখিত প্রস্তাবও ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এখন তপশিল পেছানো হলে কি তারা খুশি হবে? যুক্তরাষ্ট্রের খুশি-অখুশি বোঝা সহজ নয়। শুধু এটুকু বোঝা যাচ্ছে, তাদের অবস্থানে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসেনি। বরং শ্রম ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাতের ওপর সম্ভাব্য পদক্ষেপ এসেছে তাদের বিবেচনায়। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের তৈরি পোশাকের এক নম্বর বাজার। মুশকিল এটাও যে, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য পদক্ষেপ তার মিত্র দেশগুলোকে প্রভাবিত করবে। তেমন কিছু না ঘটুক। তবে শুধু প্রত্যাশা দিয়ে তো পরিস্থিতি সামলানো যায় না। পদক্ষেপ লাগে। সরকার শ্রম ইস্যুতে ওঠা অভিযোগগুলোর নিষ্পত্তিতে বড় দেরি করে ফেলেছে। ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণও করা হলো নির্বাচনের সময়ে এসে। অনেকের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র চাইলে শ্রম ইস্যুতেও সরকারকে ফেলতে পারে বিপাকে। আর সেটা নির্বাচনের আগেই!