২৮ অক্টোবরের সহিংসতা এড়ানো যেত কি যেত না, তা নিয়ে নানা দিক থেকেই আলোচনা হতেই পারে। কারা কোন উদ্দেশ্য থেকে সহিংসতার সূত্রপাত করেছিল, তা নিয়েও নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ হতে পারে। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে সংঘাত শুরু হলে রাজনীতি যে আর নিয়মতান্ত্রিক পথে থাকবে না, সেই বোঝাপড়া ও হিসাবনিকাশ সরকারি দল ও বিরোধী দল— কোনো পক্ষেরই না থাকার কোনো কারণ নেই।
নির্বাচনপন্থী রাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের রাজনীতির প্রধান দুই শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রতিবার ভোটের আগে রাজপথে শক্তির লড়াইয়ে নামে। তাদের বদ্ধমূল বিশ্বাস রাজপথে শক্তিতে যারা জেতে, তারাই ভোটের লড়াইয়ে জিতে ক্ষমতায় বসে। পরপর দুটি অগ্রহণযোগ্য ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর এবার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারি দল আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্য দলগুলো মাঠে শক্তি দেখানোর মহড়ায় নামে। গত বছরের আগস্টে বিএনপির বিভাগীয় পর্যায়ের সমাবেশ থেকে শুরু হয় এ মহড়া। গত ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের সেই পর্বটি শেষ হলো।
এ পর্বে বিএনপি সমাবেশ ডাকলেই আওয়ামী লীগও তার পাল্টা সমাবেশ ডেকেছে। এতে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে। সংঘাতের আশঙ্কা ছড়িয়েছে। কিন্তু রাজনীতিতে একটা স্বাস্থ্যকর আবহ ছিল। ২৮ অক্টোবরের পর দুই পক্ষই চরমপন্থা বেছে নিয়েছে। সমাবেশ পণ্ড হওয়ায় বিএনপি মঞ্চ থেকেই পরের দিন সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল দেয়। এক দিন বিরতি দিয়ে তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি দেয়। এরপর সাপ্তাহিক ছুটির দুদিন বিরতি দিয়ে আবার দুই দিনের অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে। ফলে বেশ কয়েক বছর পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস কর্মসূচির প্রত্যাবর্তন ঘটেছে।
অন্যদিকে ২৮ অক্টোবরের সহিংসতার পর সরকার হরেদরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দেওয়া ও গ্রেপ্তারের কৌশল নিয়েছে। বেছে বেছে সংগঠকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে তৃণমূল—সব পর্যায়ে সংগঠকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে যার সূত্রপাত। তাঁর বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের ফটক ভেঙে ইটপাটকেল নিক্ষেপের মামলা দেওয়া হয়। রিমান্ড আবেদন করা হলে আদালতে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান।