দলীয় আর নির্দলীয়-অদলীয় সব পেশাজীবীই এখন কম-বেশি রাজনৈতিক। দলের বাইরে সমাজ নয়, উপাসনালয়, দোকান বা শোরুমও নয়। কূটনীতিক-অর্থনীতিকরাও পুরোদস্তুর ব্যস্ত রাজনীতিক ক্রিয়া-কর্মে। তা দেশিরাও, বিদেশিরাও। বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগাদা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর ভূমিকা স্পষ্ট। জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো নিরিবিলি স্বভাবের দেশগুলোও সম্প্রতি নীরবতা ভেঙে সরব। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পাইকারি গ্রেপ্তারে উদ্বেগ ধরে রাখছে না তারা।
পরিস্থিতির অনিবার্যতায় সরকার তার প্রতিপক্ষকে ধরে-মেরে, নির্যাতনে-নির্বাসনে নিতে চায়, সেই বার্তাটি পরিষ্কার সবার কাছে। আপাতত সরকার এর বিকল্প দেখছে না। বিরোধী দলের সঙ্গে হিডেন আলাপ বা বোঝাপড়ার রাস্তাটাও বন্ধ করে দিয়েছে সজ্জন-আলাপি মানুষ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আলতাফ হোসেন চৌধুরীদের মতো নেতাদের জেলে পুরে। প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা, পুলিশ হত্যা, গাড়িতে আগুন দেওয়াসহ নাশকতার মামলার আসামি করা হয়েছে তাদের। এমনিতেই কারাগারগুলোর ধারণক্ষমতা শেষ হয়ে গেছে। সেখানে এখন বিএনপি নেতাকর্মীতে গিজগিজ দশা। বাইরে যারা আছে তাদের দিয়ে কয়েকটি আলাদা বিএনপি বানানোর আয়োজনও চলছে। আসল বিএনপি, তৃণমূল বিএনপি, বিএনএ, বিএনএস ধরনের দল পয়দায় বরকত আসেনি। গোয়েন্দা অফিসে নিয়ে খানাপিনা করানোও তেমন ফল দেয়নি। জেলের বাইরে থাকা বাদ বাকি কয়েকজনকে এখন পাঁচতারকা হোটেলে নিয়ে দল ভাঙার ডার্টি গেমের খবর বেশ চাউর। সরকার বিএনপিকে নির্বাসনে রেখে একটি নির্বাচন তুলে আনতে চায়, তা পরিষ্কার। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বার্তা আরও পরিষ্কার। এক শতাংশ ভোট কাস্ট হলেও নির্বাচন আইনত বৈধ বলে জানিয়েছেন তিনি। এও বলেছেন, লেজিটিমেসির দিকে তারা যাবেন না। তারা থাকবেন বৈধতা ও সংবিধানের দিকে।
এসবের মধ্য দিয়ে সামনের নির্বাচনের ধরন মোটামুটি পরিষ্কার। লক্ষ্মীপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এর একটা রিহার্সেল বা ড্রাই রান হয়েছে। লক্ষ্মীপুর-৩ সদর আসনে দিনের মধ্যভাগে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল মার্কা প্রার্থী মোহাম্মদ রাকিব এবং জাকের পার্টির গোলাপ ফুল মার্কা প্রার্থী সামসুল করিম ভোট বর্জন করেন। তাদের অভিযোগ, কেন্দ্রগুলো থেকে তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর লোকজন জাল ভোট দিয়েছে। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো পাত্তা মেলেনি। তারা যে অভিযোগই করুক, আইনত এ নির্বাচন বৈধ। তার ওপর নিয়মরক্ষার বিষয়। এ বৈধতা হাসিল ও নিয়মরক্ষার জন্য রাষ্ট্রের টাকা খরচের ঘটনাকে তামাশা বলা আইনত শোভন নাও হতে পারে। এ দুজন ব্যক্তি মহান সংসদের মাননীয় হবেন। শপথ নেবেন, নামের সঙ্গে এমপি যোগ করবেন। কিছু প্রিভিলেজ ভোগ করবেন। সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন না। কারণ চলতি সংসদের আর কোনো অধিবেশন বসবে না। শৈশবের কলাপাতা বা কচুপাতার ঘর বানিয়ে সংসার সাজানোর খেলার সঙ্গে বেশ মিল। কিন্তু বৈধ। লাজশরম, লেজিটিমেসিতে যায়-আসে না। লজ্জায় ফ্রিজারমেটিভ মাখা।