বাংলাদেশের ইতিহাসে ২৮ অক্টোবর একটা ব্ল্যাকহোলের নাম। ২০০৬ সালে এই দিনে আওয়ামী লীগ ঢাকায় লগি-বৈঠার মিছিল ডেকেছিল। উদ্দেশ্য ছিল রাজপথে নেমে বিএনপি-জামায়াত ও পুলিশের সম্মিলিত শক্তিকে প্রতিহত করা। অর্থাৎ বলপ্রয়োগের মাধ্যমে টিকে থাকতে চাওয়া বিএনপি সরকারকে পাল্টা বলপ্রয়োগের মাধ্যমেই ক্ষমতার আসন থেকে উৎখাত করা। এই লক্ষ্যেরই টার্নিং পয়েন্ট ছিল ২৮ অক্টোবর। সেদিন পল্টন-গুলিস্তান এলাকা যুদ্ধক্ষেত্রের রূপ নেয়। সারাদেশে নিহত হয় কমপক্ষে ১১, বেশিরপক্ষে ১৩ জন। রাজপথে এক শিবির নেতাকে পিটিয়ে হত্যার উল্লাসের দৃশ্য জন্ম নেয়। শিবির ও লীগ কর্মীদের পিস্তলসহ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করতে দেখা যায়।
২৮ অক্টোবর ও ‘যে কোনো উপায়’
২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ‘যে কোনো’ উপায়ের আশ্রয় নিতে চেয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটও ‘যে কোনো’ উপায়ে তা ঠেকাতে মরিয়া ছিল। এই দুই নিরুপায়ের মরিয়া টানাটানিতে দেশ গিয়ে পড়ে জরুরি অবস্থার সুড়ঙ্গে। সেই সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছিল ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর। সেদিন সহিংসতার যে চানমারি শুরু হয়, তা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ভূপাতিত করে। রাজনীতিও ওই সুড়ঙ্গ দিয়ে ব্ল্যাকহোলে ঢুকে পড়ে। সেখান থেকে গণতন্ত্র যে ফিরতে পেরেছে, তা এখনও বলা যাচ্ছে না। ১৭ বছর পরে আরও একটা ২৮ অক্টোবর আসতে যাচ্ছে। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর গণতন্ত্র সুড়ঙ্গ থেকে বের হবে বলে আশা করছে বিএনপি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, এই দিনটাই হবে ‘টার্নিং পয়েন্ট’। বলেছেন, আওয়ামী লীগের ‘পালানোর কোনো পথ নেই, তাদের সময় শেষ।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ পূরণ হবে না।’
এরই মধ্যে চলে এলো আনসার ব্যাটালিয়নের ক্ষমতায়ন বিতর্ক। জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনে আনসার ব্যাটালিয়ন বিল-২০২৩ উত্থাপিত হয়েছে। বিলটিতে বাহিনীটিকে গ্রেপ্তার, যে কোনো স্থানে প্রবেশ এবং মালপত্র জব্দ করার ক্ষমতা দেওয়ার কথা আছে। আনসার বাহিনীর সদস্যদের অপরাধের বিচারের জন্য আনসার ব্যাটালিয়ন আদালত গঠনের ধারাও এই বিলে রয়েছে। বিলটি পাস হলে এই জনসেবক বাহিনী আধা সামরিক বাহিনীর চেহারা নেবে। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, এমন ক্ষমতা দেওয়ার সুযোগ নেই, বিলে তেমন কিছু থাকলেও তা পাস হবে না। সম্ভবত পুলিশ বাহিনীর আপত্তিকে আমলে নিয়েই তিনি এই কথা বলেছেন।