চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি তুলার গুদামে আগুন লাগার ঘটনা খবর হয়েছে। তবে ওখানে বড় খবর তৈরি হয়েছিল কিছুদিন আগে, যখন সীমা গ্রুপের একটি অক্সিজেন প্লান্টে ভয়ানক বিস্ফোরণ ঘটে। এ সম্পর্কে এলাকাবাসী যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা রোমহর্ষক। কারখানায় কর্মরতদের মধ্যে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁর মধ্যে একজনের স্ত্রী ‘অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড’ মামলা করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে নিরাপত্তার বেশ কিছু শর্ত পরিপালন না করে প্লান্টটি পরিচালনার প্রমাণও তো মিলেছে। এমনই ধারার কার্যক্রম পরিচালনায় শতভাগ সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েই এগোতে হয়। প্রাতিষ্ঠানিক নজরদারিও জারি রাখতে হয় সেই মাত্রায়। এটা না পারলে এ ধরনের ব্যবসায় না যাওয়াই ভালো। সবাইকে সবকিছু করতে হবে কেন?
সীমা গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেরও খবর দিয়েছে দৈনিক সমকাল। তাতে দেখা যাচ্ছে, ব্যবসা দক্ষভাবে পরিচালিত হচ্ছে না বলে তাদের ঋণ জোগানো ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লেনদেন সুষ্ঠু রাখতে পারছে না মালিকপক্ষ। শেষে তাদের অক্সিজেন প্লান্টে যা ঘটে গেল, তাতে ব্যাংকগুলোর আরও দুশ্চিন্তায় পড়াই স্বাভাবিক। ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি অবশ্য এসব সামলে চলতে অভ্যস্ত। তাদের সব ক্লায়েন্ট তো সীমা গ্রুপের মতোও নয়। তবে এর একটি প্লান্টে কাজ করতে এসে বিস্ফোরণে যাঁরা প্রাণ হারালেন, তাঁদের পরিবারের কী হবে? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁরা হয়ে থাকেন একমাত্র বা প্রধান উপার্জনকারী।
যাঁরা আহত হয়ে হাসপাতালে, তাঁদের চিকিৎসা সংকট ও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুর্ভাবনার খবর আসছে মিডিয়ায়। মালিকপক্ষ বলছে, তারা যথাসাধ্য করবে। তাকে তো এখন মামলাও মোকাবিলা করতে হবে। শ্রমিক অধিকার নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের উচিত হবে এর সুষ্ঠু ও দ্রুত নিষ্পত্তিতে সহায়তা করা। অক্সিজেন প্লান্টটি কর্তৃপক্ষীয় নজরদারির একেবারে বাইরে ছিল না অবশ্য। তাদের নিরাপত্তা শর্ত পালন করতে বলাও হয়েছিল। এরই মধ্যে ঘটে যায় দুর্ঘটনা। ছাদ উড়ে যায়, দেয়াল ফেটে যায় এবং ছিন্নভিন্ন ইস্পাতের টুকরো অনেক দূরে গিয়ে ঘটনার সঙ্গে অসংশ্লিষ্ট একজনের করুণ মৃত্যু ঘটায়। ওটার কাছাকাছি যাঁরা বসবাস করেন, তাঁদের ঘরবাড়িও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এর ক্ষতিপূরণ দেবে কে?
বিস্ফোরণের শব্দে যাদের শ্রবণশক্তির ক্ষতি হয়েছে এবং ট্রমার মধ্যে পড়েছে যেসব শিশু, সে বিষয়ে কাকে কী বলব আমরা?
তুলা রাখার ডিপোর অগ্নিকাণ্ড সীমা প্লান্টের তুলনায় কিছুই না। অথচ সেটার আগুন নেভাতেও অনেক সময় লেগেছে। কীসের আগুন কীভাবে নেভাতে হয়, সে বিষয়ে জ্ঞানের না হলেও প্রযুক্তিগত সক্ষমতায় ঘাটতি আছে। আমাদের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবার স্বাধীনতা পদক পেয়েছে। এটা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার। সীমিত লোকবল ও সরঞ্জাম দিয়ে তারা অনেক ক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ভালো ভূমিকা রাখছে। দেশে যেভাবে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড বেড়ে চলেছে, তাতে এ প্রতিষ্ঠানে রাষ্ট্রের মনোযোগ আরও বাড়াতে হবে।
বছর দেড়েক আগে সীতাকুণ্ড অঞ্চলেই বিএম কনটেইনার ডিপোতে এর চেয়ে ভয়াবহ যে বিস্ফোরণ ঘটে, তাতে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে তাদের বেশ ক’জন তথ্য ও ধারণার অভাবে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারান। ডিপোতে যে তৈরি পোশাকের সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের মতো মারাত্মক দাহ্য বস্তুর কনটেইনার রাখা ছিল, সেটা তাঁরা লক্ষ্য করেননি। ওই ডিপো যাঁরা গড়ে তুলেছিলেন, তাঁদের একজন নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী। তিনিও ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো পরিচালনায় নিরাপত্তার শর্ত পূরণে এগিয়ে আসেননি। এ দেশে ব্যবসা করতে এসে অনেকেই স্থানীয়দের মতো করে চলতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন।