চারদিনের সফরে ভারতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সফরকে ঘিরে চলছে আলোচনা, পর্যালোচনা, সমালোচনা। দেশের মানুষের অসীম চাওয়া-পাওয়ার হিসেব কষছেন অনেকেই। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে ঘিরে অনেকে নির্বাচনের হিসেবও কষছেন। কিন্তু যেই হিসেবটি কেউ করছে না, তা হলো বিগত ১২ বছর ধরে চলমান বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাগ্রহণের পর প্রতিবেশী দেশ দুটির সম্পর্ক যেই উচ্চতায় পৌঁছেছে তা বিশ্ব জুড়েই আলোচিত ও সমাদৃত। দুই দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, শিল্প সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিসহ সকল ক্ষেত্রে যেই সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থান তার কেন্দ্রে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশ-ভারত বর্ডারকে ঘিরে চলমান সন্ত্রাসী কার্যক্রম শূন্যের কোঠায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর নিরাপদ আশ্রয়ের ঠিকানা উচ্ছেদ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাগ্রহণের পর। শক্ত হাতে দুই দেশের মধ্যকার সকল সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে এই দুই নেতৃত্বের বলিষ্ঠ ভূমিকার কল্যাণে। শুধু তাই নয়, দুই দেশের মধ্যকার বন্দি বিনিময় থেকে শুরু করে অসংখ্য ক্ষেত্রে এসেছে সাফল্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক খুনিকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করেছে ভারত। এ সব অর্জন সম্ভব হয়েছে দুই দেশের মধ্যকার দৃঢ় সম্পর্কের কারণেই।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতি ছিলো ১৯৯০-৯৫ এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে। সেই বাণিজ্য ঘাটতি দূর হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর। দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও উন্নয়নে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা আদায়ে আলোচনা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরে। সেই সঙ্গে ভারতের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে উদার রাষ্ট্র বলে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের অবকাঠামো প্রকল্প, উৎপাদন, জ্বালানি ও পরিবহন খাতে বিনিয়োগ সম্ভাবনা বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করব। ভারতীয় বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সময়, খরচ কমিয়ে বাই-ব্যাক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে শিল্প স্থাপন করতে পারে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এই অঞ্চলের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থা রয়েছে যেখানে বিস্তৃত সুযোগ-সুবিধা, আকর্ষণীয় প্রণোদনা নীতি এবং ধারাবাহিক সংস্কার প্রক্রিয়ার সুযোগ রয়েছে।
ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের সুবিধাজনক অবস্থানের কথা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী জানান, ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা তাদের পণ্য শুধুমাত্র ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতেই নয়, নেপাল, ভুটান এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও রফতানি করতে সক্ষম হবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় বেশ আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভারতকেও আশ্বস্ত করেছে প্রধানমন্ত্রী। ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন বলেন, বাংলাদেশ সরকার প্রকাশ্যে এবং বৈঠকে ব্যক্তিগতভাবেও জানিয়েছেন বাংলাদেশ সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করবে।