বাংলাদেশ একটি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আমাদের এ স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে ভারতের অবদান অস্বীকার করা রীতিমতো বড় ধরনের অন্যায়। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য, এটাই যে আমাদের দেশের কিছু মানুষ ভারতকে সহ্য করতে পারেন না, তাদের অস্থিমজ্জায় ভারতবিরোধিতা প্রবলভাবে ঠাঁই করে নিয়েছে।
একটি ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে আলোচনাটা শুরু করা যাক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশ সফরে যান, কখনো কেউ কি প্রশ্ন তোলেন, ওই দেশ থেকে তিনি কী আনলেন অথবা ওই দেশকে কী দিয়ে এলেন? কিন্তু দেখুন, সম্প্রতি চার দিনের ভারত সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর থেকে শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নয়, মূলধারার সংবাদপত্রেও কেমন হাহাকার, প্রধানমন্ত্রী ভারতকে কী দিয়ে এলেন এবং কী নিয়ে এলেন? আবার দেখুন, বাংলাদেশের ইলিশ সারা দুনিয়াতেই যায়। পৃথিবীজুড়ে বাঙালি অধ্যুষিত দেশগুলোয় বাংলাদেশি দোকানে ইলিশ কি পাওয়া যায় না? বিদেশে কীভাবে বা কেন ইলিশ যায়, সে প্রশ্ন কী কেউ তোলেন? অথচ ভারতে বা পশ্চিম বাংলায় কেন ইলিশ গেল, তা নিয়ে হইচইয়ের শেষ নেই। কারণটা কী? একে আমি বলতে চাই ‘ভারতরোগ’। এ রোগে আক্রান্তদের মনের গহিনে লুকিয়ে আছে ‘পাকিস্তান’ এবং ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব’। এরা এতটাই রোগগ্রস্ত যে, তাদের চিকিৎসাও প্রায় অসম্ভব।
একবার একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের কথা ভাবুন। বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন প্রায় এক কোটি মানুষ। এ শরণার্থীদের ভার বহন করতে হয়েছে ভারতকে। ভারতের সাধারণ মানুষকেও কম কষ্ট করতে হয়নি। তাদের দিতে হয়েছে ‘শরণার্থী ট্যাক্স’। আগরতলায় স্থানীয় জনসংখ্যার চেয়ে শরণার্থীর সংখ্যা বেশি হয়েছিল। এত মানুষের বাড়তি চাপ কিন্তু ভারতের মানুষ সহ্য করছে। মানুষ যদি অসহযোগিতা করত, তাহলে ভারত সরকারের জন্য বড় সমস্যা হতো।
কেউ এ প্রশ্ন করতেই পারেন যে, বাংলাদেশকে সাহায্য করার পেছনে কি ভারতের কোনোই স্বার্থ ছিল না? নিশ্চয়ই শুধু মানবিক কারণে কোনো দেশ কোনো দেশকে সাহায্য করে না। তবে আবার এটিও ঠিক যে, মানবিকবোধ না থাকলে রাজনৈতিক স্বার্থেও অনেক ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। ভারত একাত্তরে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এজন্যই যে, বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হলে আরেকটি পাকিস্তান হবে না। প্রতিবেশী বৈরী হলে কত ধরনের বিপদ বা অসুবিধা হয়, তা পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা থেকে ভারত শিখেছে।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়া জরুরি দুই দেশের মানুষের স্বার্থেই। বৈধ-অবৈধ পথে এক দেশ থেকে আরেক দেশে পণ্য বিনিময় অব্যাহত না থাকলে মূল্যবৃদ্ধির চাপ কিন্তু সাধারণ মানুষকেই সহ্য করতে হয়। বোঝার সুবিধার জন্য একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। কলকাতার একটি টিভি চ্যানেলে খবর দেখলাম বাংলাদেশ ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেবে; সঙ্গে কাঁচা মরিচও।