'দেশে চা-শিল্পের ১৬৮ বছরের ইতিহাসে চা-শ্রমিকদের মজুরি ১৬৮ টাকাও হলো না। এখনো আমাদের মজুরি মাত্র ১২০ টাকা। এখন ২ কেজি চাল বা ২ হালি ডিমের সমান।'
এমন আক্ষেপের কথা দ্য ডেইলি স্টারকে বললেন, চা শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজারের আহ্বায়ক রাজদেও কৈরী।
তিনি মনে করেন, বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করে ৬/৭ জনের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য দৈনিক ৬৭০ টাকা মজুরিসহ চা-শিল্পে নৈমিত্তিক ছুটি (বছরে ১০ দিন) কার্যকর ও অর্জিত ছুটির বিষয়ে শ্রম আইনের বৈষম্য দূর করে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন এবং শ্রম আইন মেনে নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিসবুক দেওয়া ও ৯০ দিন কাজ করলেই সব শ্রমিককে স্থায়ী করার বিষয়টি বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
চা-বোর্ডের তথ্য অনুসারে দেশের ১৬৭ চা-বাগানে ৫ লাখের বেশি চা-জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্থায়ী শ্রমিক প্রায় এক লাখ। একজন শ্রমিকের মজুরির ওপর কমপক্ষে ৫ জনের ভরণপোষণ নির্ভর করে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে ৩০০ টাকা মজুরি পেলেও তা সম্ভব না।
সরকার দলীয় এমপি উপাধ্যক্ষ ড. আব্দুশ শহীদ জাতীয় সংসদে চা-শ্রমিকদের জন্য ৫০০ টাকা মজুরির পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন।
চা-বাগান সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শ্রমিকদের কঠোর পরিশ্রমে চা উৎপাদনে বাংলাদেশ নবমস্থানে ওঠে এসেছে। করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রমিকরা উৎপাদনে সক্রিয় থাকায় ২০২১ সালে দেশে ৯৬ দশমিক ৫০৬ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়।
প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চা-শ্রমিকরা দৈনিক ২৩২ রুপি (২৭৭ টাকা) পেয়েও মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছেন। শ্রীলঙ্কা ও নেপালসহ শীর্ষ চা-উৎপাদনকারী দেশ চীন ও কেনিয়ার চেয়ে বাংলাদেশের চা-শ্রমিকদের মজুরি অনেক কম। চা শ্রমিক ইউনিয়ন দাবি করেছে দেশের চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার।
সরকারি তথ্য অনুসারে, দেশে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলার অর্থাৎ ২ লাখ ৬৮ হাজার ২৮০ টাকা। চা-শ্রমিকদের সর্বোচ্চ আয় মাসিক ৩ হাজার ৬০০ টাকা হিসেবে বার্ষিক আয় ৪৩ হাজার ২০০ টাকা।
বর্তমানে চা-শ্রমিকরা দৈনিক সর্বোচ্চ মজুরি পাচ্ছেন ১২০ টাকা। তাদের মজুরি বাড়ানোর চুক্তি হওয়ার কথা প্রতি ২ বছর পর পর।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে আগের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর শ্রীমঙ্গলে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সই হয়। ওই চুক্তিতে চা-শ্রমিকদের মজুরি ১০২ টাকা থেকে ১২০ টাকায় উন্নীত করা হয়।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়।