সাহিত্য সমাজের দর্পণস্বরূপ। সাহিত্যের চারণভূমিতে ফুটে ওঠে যাপিত জীবনের নানা অনুষঙ্গ। যুগে যুগে শত সহস্র সভ্যতার পতন ঘটলেও শিল্পসৃষ্টির মাহাত্ম্য ততধিক ঔজ্জ্ব্যেলের সঙ্গে টিকে আছে। হোমার, মিল্টন, শেপপিয়ার, রুমি, শেখ সাদি, কালিদাস, চণ্ডীদাস, ভারতচন্দ্র, মুকুন্দরাম, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল প্রমুখ সমানভাবে বিশ্বসমাজে সমাদৃত মানবিক পৃথিবীর প্রতিনিধিরূপে। তারা সর্বজনীন মানব পরিবারের সন্তান। জগতের কল্যাণপ্রসূ ভাব-ভাবনা নিয়েই তাদের আবির্ভাব ঘটে।
বাংলা সাহিত্যে সম্প্রীতির ইতিহাস দেদীপ্যমান। আমাদের সাহিত্যে সুপ্রাচীনকাল থেকে সামাজিক বিভাজনের চেয়ে সামাজিক সম্প্রীতির নির্মাণ জাজ্বল্যমান। ১৯২০-২১ সালে খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে মাওলানা মুহাম্মদ আলি ও গান্ধীজির নেতৃত্বে হিন্দু-মুসলমানের পুনর্মিলনের একটা উদ্যোগ শুরু হয়। রবীন্দ্রনাথ বুঝেছিলেন এই মিলন স্থায়ী হবে না। 'সমস্যা' নামে একটি প্রবন্ধে কবি লেখেন, 'প্রধান সমস্যা হিন্দু-মুসলমান সমস্যা। তার সমাধান এত দুঃসাধ্য, কারণ দুই পক্ষই মূলত আপন আপন ধর্ম দ্বারাই অচলভাবে আপনাদের সীমা নির্দেশ করেছে। সেই ধর্মই আমাদের মানববিশ্বাসকে সাদাকালো ছক কেটে সুস্পষ্টভাবে বিভক্ত করেছে আত্ম ও পর।