দেশের পোশাকশিল্পে বড় ধরনের অস্থিরতা চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী এ শিল্প।। বার্ষিক ১৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের দাবিতে বুধবার শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় কর্মবিরতি পালন করেছেন ৩৫টি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এদিন সকালে শ্রমিকদের সবাই কারখানায় প্রবেশ করে উৎপাদন বন্ধ রেখে ১৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের দাবি তুলে কারখানা থেকে বেরিয়ে আসেন। উল্লেখ্য, কর্তৃপক্ষ ৯ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের ঘোষণা দিয়েছিল। এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে শ্রমিকরা কাজে যোগদান থেকে বিরত রয়েছেন, অবশ্য তারা শান্তিপূর্ণভাবেই দাবি আদায়ের চেষ্টা করছেন।
ইতঃপূর্বে আমরা দেখেছি, পোশাকশিল্পে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করেছে। গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভার অঞ্চলের কারখানাগুলো বন্ধ ছিল বেশ কিছুদিন। কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। ধারণা করা হয়েছে, এসবের পেছনে বহিরাগতদের ইন্ধন ছিল। বলা বাহুল্য, দেশের পোশাক খাত নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এর পাশাপশি কোনো কোনো কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন-ভাতা পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার কারণেও শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। পরিতাপের বিষয়, যেসব কারখানায় বেতন-ভাতাদি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই, সেসব কারখানায়ও অস্থিরতার সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।
এ দেশের অর্থনীতি যে তিনটি বড় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, সেগুলো হলো : কৃষি, পোশাক খাত ও রেমিট্যান্স। অথচ কৃষি ও রেমিট্যান্সের ক্ষেত্র দুটিতে উন্নতি দেখা গেলেও পোশাক খাতটি নাজুক হয়ে পড়েছে। এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। এ খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে অবশ্যই। আমরা আশা করব, সমঝোতার মধ্য দিয়ে পোশাক খাতে অস্থিরতার অবসান হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, শ্রমিক অসন্তোষ এড়াতে হলে তাদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া পূরণ করতে হবে। শ্রমিকের বকেয়া মজুরি পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া উচিত হবে না। মনে রাখতে হবে, পোশাক খাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে বলে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন বিদেশি ক্রেতারা। নতুন অর্ডার দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন তারা। রপ্তানিমুখী এ শিল্পকে বাঁচাতে হলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেওয়ার আগেই সব মহল সতর্ক না হলে অর্থনীতি দুর্বিপাকে পড়বে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।