৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৯৪ সালে ৯ আগস্টকে আদিবাসী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে এবং দিবসটি পালনের জন্য সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে আহ্বান জানায়। তার পর থেকে গত তিন দশকে বৈশ্বিক পর্যায়ে অনেক সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
এর মধ্যে ২০০০ সালে জাতিসংঘে আদিবাসীবিষয়ক স্থায়ী ফোরাম গঠন, ২০০১ সাল থেকে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকারবিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার নিয়োগ, ২০০৫-২০১৪ সালের সময়কালকে দ্বিতীয় আদিবাসী দশক হিসেবে পালন, ২০০৭ সালে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র গ্রহণ ও আদিবাসী অধিকার-সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কর্মব্যবস্থা প্রবর্তন, ২০১৪ সালে সাধারণ পরিষদের বিশ্ব আদিবাসী সম্মেলন আয়োজন এবং এ সম্মেলনে ঐতিহাসিক ‘আউটকাম ডকুমেন্ট’ গ্রহণ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়’ (লিভ নো ওয়ান বিহাইন্ড) স্লোগান নিয়ে যে এসডিজি বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ২০৩০ এজেন্ডা জাতিসংঘ গ্রহণ করেছে, সেখানে আদিবাসীদের কথা বিশেষভাবে বলা হয়েছে।
দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে গেলেও আদিবাসী মানুষের মুক্তি মেলা তো দূরের কথা, তাদের ওপর শোষণ ও বঞ্চনার অবসান হয়নি। দেশের ৩০ লক্ষাধিক আদিবাসী মানুষ মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। সম্পূর্ণ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে আদিবাসী ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনধারাকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ক্রমাগতভাবে আদিবাসীদের ভূমি অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
- দেশের ৩০ লক্ষাধিক আদিবাসী মানুষ মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। ক্রমাগতভাবে আদিবাসীদের ভূমি অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
- আমরা আশা করব, নতুন সরকার দেশের আদিবাসীসহ সব নাগরিকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, মানবিক ও সংবেদনশীল আচরণ করবে।
- সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় আদিবাসীদের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ জরুরি। সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের জন্য বিশেষ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা রাখা দরকার।
এই বছর আদিবাসী দিবসের মূল সুর হলো ‘প্রোটেকটিং দ্য রাইটস অব ইনডিজিনাস পিপলস ইন ভলান্টারি আইসোলেশন অ্যান্ড ইনিশিয়াল কন্টাক্ট’। এই পৃথিবীতে এখনো অনেক আদিবাসী সমাজ আছে, যেখানে তারা নিজেদের স্বকীয়তা, আত্মপরিচয় ও সংস্কৃতি নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। কোনোভাবেই জোর করে তাদের জীবনধারা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
এই দিবসে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তাঁর বাণীতে বলেছেন, ‘এ বছরের থিম আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে, আদিবাসীদের ওপর অযাচিত কোনো অধিকার বা উন্নয়ন চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। তাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনধারার ওপর জোরপূর্বক আগ্রাসন চলবে না।’ তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, ‘আসুন, আমরা আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণ করি, যাতে তারা শান্তি ও মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারে।’