কোটা সংস্কার, নাকি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন

প্রথম আলো আফসানা বেগম প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০২৪, ১৪:৫২

‘বাবুমশাই, জীবন গুরুত্বপূর্ণ হতে হবে, কেবল লম্বা নয়!’


‘আনন্দ’ সিনেমার বিখ্যাত এই ডায়ালগ লেখা ছিল তাঁর শেষ ছবিতে। মুগ্ধ নামের ছেলেটির নাতিদীর্ঘ জীবন আজ গুরুত্বপূর্ণ বটে। কারণ, তাঁর বেঁচে থাকাকে বিপদ মনে করা হয়েছে। মুগ্ধর মতো অনেককে নির্বিচারে মারা হয়েছে। কয়েক দিনে এ তালিকা দীর্ঘ হয়েছে কেবল।


দেশ ঠিকঠাকমতোই চলছিল (মানে এমনিতে যেমনটা চলে, সবার কাছে ঠিক লাগে)—এ অভিনয় নাগরিকদের দীর্ঘকালের। এর মধ্যে কিনা ছাত্রছাত্রীরা বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছেন; তাঁরা বৈষম্য দূর করার দাবি তোলেন। ‘রাজাকারের বাচ্চা, নাতি’—এসব খেতাব জুটে যায় তাঁদের কপালে।


এটা অবশ্য নতুন নয়। ২০১৮ সালে যখন সরকারি চাকরির কোটাপ্রথা সংস্কারের জন্য ছাত্ররা আন্দোলন করেছিলেন, তখনো সংসদে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা সুযোগ পাবে না, রাজাকারের বাচ্চারা সুযোগ পাবে? তাদের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংকুচিত হবে?’


অনেকে অবাক হয়েছেন, একটা দেশে এতগুলো মানুষ শুধু সরকারি চাকরির জন্য এতটা মোহগ্রস্ত হতে পারে! তাঁদের কথার সুর এমন, এ আন্দোলন তো হচ্ছে বেশি বেশি সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য। সরকারি চাকরিতে ক্ষমতা আছে, দুর্নীতি করার লাইসেন্স মেলে আর তা দিয়ে বানানো যায় অঢেল সম্পদ। এ জন্যই সরকারি চাকরির কোটা নিয়ে এত চেঁচামেচি।


আরেকবার ভেবে দেখুন, ছাত্রদের আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ল, সেটা কি শুধু এ কারণেই? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, সরকারি চাকরির প্রতি যাঁরা তুলনামূলকভাবে কম আগ্রহী কিংবা বিসিএস না দিয়ে যাঁরা আইইএলটিএস বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, তাঁরাও কেন এক স্বরে কথা বলতে লাগলেন? কেবল চাকরিপ্রার্থীরা নন, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা পর্যন্ত কোন মন্ত্রে আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেল? এ কি কেবল কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল?


কোটা নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্মের আনুষ্ঠানিক নাম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। ‘বৈষম্যবিরোধী’ কথাটা বেশ তাৎপর্যপূণ। সরকারি চাকরিতে অসামঞ্জস্যপূর্ণ অগ্রাধিকারসহ কথিত দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের মানুষের মধ্যে আয়-ব্যয়ের বিপুল ব্যবধান তৈরি করা হয়েছে। অর্থ পাচারের মাধ্যমে কিছু ব্যাংক প্রায় অচল হয়ে গেছে।


দেশে যখন এত এত খাতে বৈষম্য তৈরি হয়েছে, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন’ সংগত কারণেই সরকারকে চিন্তায় ফেলেছে। আন্দোলনকারীদের দমাতে সরকার তাই তার অনুগত বাহিনীগুলো দিয়ে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে।


সরকারের অবশ্য চিন্তা নেই; অনুগত বাহিনীর মতো আছে অনুগত মুখপাত্র ও প্রচারমাধ্যম। তাদের কাজই হলো দিন শেষে যেকোনো ঝামেলার জন্য বিরোধীদের দায়ী করা। তাদের মুখে মুখেই সমস্যা চিহ্নিত হয়, তারপর মুখে মুখেই তদন্ত শেষ করে ‘রায়’ দেওয়া হয়। যেমন কেউ একজন বলেন, এই কোটা আন্দোলনের পেছনে রয়েছে বিএনপি-জামায়াতের ইন্ধন।


এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তারাও বলতে থাকেন, তাঁদের সব জানা আছে। এই আন্দোলনের পেছনে জামায়াত-শিবির আর বিএনপির কোন কোন নেতা কোথা থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। তাঁদের কাছে নাকি দুষ্কৃতকারীদের তালিকাও আছে। অবিলম্বে তিনি তালিকা ধরে ধরে গ্রেপ্তার করবেন। কিন্তু দেখা গেল, গুলিতে হতাহত হয়েছেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। এখন আবার গ্রেপ্তার-আটক-রিমান্ডের নামে তাঁরাই দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছেন।


বাস্তবে না থাকলেও সরকারের কল্পনায় বিরোধী দলের সর্বময় উপস্থিতি। কল্পনার বিরোধী দলকে নিয়ে অনেক গল্প বলা যায়, আঁতকেও ওঠা যায়; কিন্তু তাদের কি গ্রেপ্তার করা যায়? শায়েস্তা করা যায়? তাই সামনে যে থাকে, তাকেই একহাত দেখে নিতে হয়। তাই তো জলজ্যান্ত তাজা টগবগে ছেলেগুলো রাস্তায় গুলিতে ঝাঁজরা হলো।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us