প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে সামরিক এখতিয়ারে ক্ষমতায় থাকার সময় রাজনৈতিক দলগঠনের যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন, সেটিই জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপির জন্ম দেয়। বাম-ডান-মধ্য নানা চরিত্রের লোকের সমাবেশ ঘটিয়েছিলেন তিনি।
পরের চার দশকে বিএনপি একাধিকবার ক্ষমতায় ছিল এবং ক্ষমতার বাইরেও ছিল, এখনো বাইরেই আছে। এ সময়ে ছাত্রদল ও বিএনপির অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোতে অনেক পোড় খাওয়া তরুণ রাজনৈতিক নেতাকর্মী গড়ে ওঠে। এখন সারা দেশে বিএনপির যে কমিটিগুলো হচ্ছে, সেখানে সাবেক ছাত্রদল নেতারা প্রাধান্য পাচ্ছেন। তারপরও তারা হতাশ। কারণ তাদের বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়নি। আবার এমপি-মন্ত্রীর দৌড়েও তারা পেছনে পড়েছেন। অথচ ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রনেতারা এ ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে রয়েছেন। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থাকার কারণে সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা পূরণ হয়নি ছাত্রদলের নেতাদের। ১৯৭৭ থেকে ছাত্রলীগে ১৬ জন সভাপতি ও ১৬ সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। তাদের মধ্যে ওবায়দুল কাদের বর্তমানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান সভাপতিম-লীর সদস্য। জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান বর্তমানে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী। অসীম কুমার উকিল সংসদ সদস্য ছিলেন। এখন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক। ইকবালুর রহিম ও নজরুল ইসলাম বাবু সংসদ সদস্য ও হুইপ। এনামুল হক শামীম মন্ত্রী ছিলেন। এখন সংসদ সদস্য। মাহমুদ হাসান রিপন ও এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগ ত্যাগ করা সুলতান মনসুরও সংসদ সদস্য ছিলেন।
বিপরীতে, ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি ‘উৎপাদনমুখী শিক্ষাব্যবস্থা’ স্লোগানকে সামনে রেখে পাঁচটি ছাত্রসংগঠন সম্মিলিতভাবে আত্মপ্রকাশ করে ছাত্রদল নামে। এ সংগঠনে সভাপতি ও আহ্বায়কের পদে এসেছেন ২২ জন। সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম আহ্বায়কের পদে আসীন হয়েছিলেন ২১ জন। তাদের মধ্যে মাত্র ৮ জন গোলাম সারোয়ার মিলন, শামসুজ্জামান দুদু, আমানউল্লাহ আমান, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, ইলিয়াস আলী, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ও নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু সংসদ সদস্য ছিলেন। আর বিএনপি ত্যাগ করা গোলাম সারোয়ার মিলন ও বর্তমানে বিএনপিতে সক্রিয় আমানউল্লাহ আমান মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কার্যত ‘গৃহবন্দি’। লন্ডনে বসে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপির পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দলের শীর্ষ মহল সাবেক ছাত্রদল নেতাদের সর্বোচ্চ ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে নিয়ে আসতে পারলে আগামী দিনের লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ হবে। দলের ভিত যেমন মজবুত হবে, সরকারবিরোধী আন্দোলনও চাঙ্গা হবে। তাহলে ক্ষমতায় যাওয়া ও এসব নেতার এমপি-মন্ত্রী হওয়ার পথ তৈরি হবে।