বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী, বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও সর্বজনীন সম্মানিত ব্যক্তি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চলতি বছরের প্রথম দিন শ্রম আদালতের ছয় মাসের কারাদণ্ডের রায় দেওয়ার ঘটনা দেখাটা ছিল দুঃখজনক। অথচ দিনটি নতুন বছরের প্রতিশ্রুতির দিন হওয়া উচিত ছিল।
ড. ইউনূস ইতিমধ্যে দেশে-বিদেশে মর্যাদার এমন একটি অবস্থান অর্জন করেছেন, যা তাঁর খ্যাতির ওপর লেপন করা কলঙ্ক থেকে তাঁকে নিষ্কলুষ মানুষ হিসেবে বেরিয়ে আসতে সক্ষম করে তুলবে। তাঁর বিরুদ্ধে বিচারে অবস্থান নেওয়া সরকারি কৌঁসুলিরা এতটা সুবিধাপ্রাপ্ত না–ও থাকতে পারেন।
সরকারের প্রভাবশালী কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিস্ময়করভাবে এই মামলা থেকে সরকারকে আলাদা করার চেষ্টা করেছেন। তাঁরা এটিকে সম্পূর্ণ আইনি বিষয় বলে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করছেন। তাঁরা বলছেন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর—যা রাষ্ট্রের একটি ছোট ও অখ্যাত প্রতিষ্ঠান এই মামলা করেছে।
অন্যায্য একটি সমাজে শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের অগুনতি ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। এ ধরনের হাজার হাজার মামলা শ্রম আদালতে বিচারের অপেক্ষায় পড়ে আছে। যেখানে মামলার ফাইল চলে শম্বুকগতিতে, রায় হয় কদাচিৎ। আর রায় হলেও কারাদণ্ডের সাজা বিরল। সরকারের অতীত কর্মকাণ্ডের কারণে খুব কম লোকই এ কথা বিশ্বাস করেন যে অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এমন একটি মামলা করেছেন, যে মামলার বৈশ্বিক প্রভাব থাকতে পারে। আর মামলাটি অভূতপূর্ব গতিতে এগিয়েছে, যাতে রেকর্ড কম সময়ের মধ্যে সাজার রায় হয়ে গেছে।
এমন একটি বহুল আলোচিত ও প্রচারিত রায় ইতিমধ্যে আমাদের বিচারব্যবস্থা ও শাসনচর্চাকে জনপরীক্ষার মুখে ফেলেছে। নোবেলজয়ী ও বিশ্বের বিশিষ্ট ১৬৪ ব্যক্তি ইতিমধ্যে অধ্যাপক ইউনূসকে ‘হয়রানি’ করার বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। তাঁরা আদালতের এই রায়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে থাকবেন। এসব বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের অনেকেই এখন বাংলাদেশের শ্রম আদালতের রায়ের বিশদ বিবরণ আরও নিবিড়ভাবে যাচাইয়ে তাঁদের উচ্চ ধীশক্তি প্রয়োগে মনোনিবেশ করতে পারেন, যাতে তাঁরা মামলার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য সম্পর্কে নিজস্ব সিদ্ধান্ত টানতে পারেন।