অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হলো। এর আগে এই নির্বাচন কীভাবে হবে, তা নিয়ে অনেক কথাই হয়েছে। বিএনপিবিহীন নির্বাচনে জাতীয় পার্টিও যদি অংশ না নেয় তাহলে কী পরিস্থিতি দাঁড়ায়, তা নিয়েও মানুষের ভেতর কৌতূহল ছিল। কারণ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করবে কি না, তা নিয়ে শেষ মুহূর্তে কিছুটা নাটকীয়তার সৃষ্টি হয়েছিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন দুপুরে জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারকেরা যখন মিটিং করছিলেন, তখন দলীয় কার্যালয়ের বাইরে অনেক নেতা-কর্মীই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।
এবারের নির্বাচনে ২৬টি আসন আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিলেও জাতীয় পার্টি সন্তুষ্ট ছিল না। ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে যাতে সরে দাঁড়ান, এর ব্যবস্থা করার জন্য আওয়ামী লীগের কাছে তাঁরা দাবি করেছিলেন। তা ছাড়া আরও কিছু আসন ছেড়ে দেওয়ার আবদার তো ছিলই। আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির কোনো দাবি বা আবদার না রাখলেও দলটি নির্বাচনে যে অংশগ্রহণ করবে, সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নিশ্চিত ছিল। শেষ পর্যন্ত তা-ই হয়েছে। আওয়ামী লীগ যেভাবে চেয়েছে তা মেনে নিয়েই জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে।
এবারের নির্বাচন কেমন হয়েছে, তা নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার দুটো বক্তব্য সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তিনি বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে কে কী বলছে, তা নিয়ে তিনি মাথা ঘামান না। তিনি বরং জোর দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। এ নির্বাচন দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বক্তব্য ছিল শেখ হাসিনার বক্তব্যের সম্পূর্ণ উল্টো। তিনি বলেছেন, ‘সরকারের নিয়ন্ত্রণে এ নির্বাচন হয়েছে। সরকার যেখানে নিরপেক্ষ করতে চেয়েছে, সেখানে নিরপেক্ষ হয়েছে। সরকার যেখানে যাকে জেতাতে চেয়েছে, সেটিই করেছে।’ আওয়ামী লীগের শরিক দল জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনুও ভোট জালিয়াতির কথা বলেছেন। জনগণের ভোটে নয়, কারচুপির ভোটে তাঁকে পরাজিত করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগও করেন। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি নিয়ে নৌকার অনেক প্রার্থীরও বিস্তর অভিযোগ আছে।
এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার জন্য আওয়ামী লীগ যে পরিকল্পনা করেছিল বাস্তবে তা ঘটেনি। তারা চেয়েছিল, ৫০ শতাংশ ভোটারও যদি ভোট দেন, তাহলে নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে প্রচার করা যাবে। এ জন্য ব্যাপক প্রস্তুতিও নিয়েছিল। এমনকি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনার জন্য ভয়ভীতি দেখানোসহ নানা কৌশল গ্রহণ করেও ফল হয়নি। বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং পর্যবেক্ষকদের হিসাব অনুযায়ী, ২০ শতাংশের নিচে ভোট কাস্ট হলেও নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে ৪১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। কমিশনের দেওয়া এ তথ্য নিয়েও বিতর্ক আছে। এই বিতর্কের জন্য অবশ্য নির্বাচন কমিশনকেই দায়ী করা চলে। বেলা ৩টায় নির্বাচন কমিশনের প্রশাসনিক বিভাগ থেকে ভোট গ্রহণের যে হিসাব পাওয়া গিয়েছিল তাতে দেখা গেছে, ভোট পড়েছে মাত্র ২৮ শতাংশ।
সেখানে বিকেল ৪টার মধ্যে আরও ১৪ শতাংশ ভোট পড়ল কী করে, সেই হিসাব মিলিয়ে নির্বাচন কমিশন জনগণকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। এমনকি বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা পর্যন্ত এ ব্যাপারে বিভ্রান্ত। জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশেষজ্ঞসহ যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের প্রতিনিধিরাও নির্বাচন কমিশনের কাছে ভোটের সঠিক হার জানতে চেয়েছেন।