আমি প্রায়ই সরকারের সমালোচনা করি। সেটা যে অন্যায্য নয়, তা মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখে বুঝতে পারি। যেমন ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের তিন দিন পর বিবিসি বাংলার একটি আলোচনায় অংশ নিলাম। অনলাইনে হাজার পাঁচেক মন্তব্য করা হলো এটি নিয়ে; এর প্রায় ৮০ শতাংশই হচ্ছে প্রশংসাসূচক।
আমি এতে অবাক হইনি। কে না জানে, বাংলাদেশের মতো সমস্যাপীড়িত দেশে সরকারের প্রতি মানুষের অসন্তুষ্টি (অ্যান্টি-ইনকাম্বেন্সি) থাকে বেশি। সরকারের ওপর রাগ থাকলে মানুষ ভোট দিয়ে এর উত্তর দেয়। সেই ভোট দেওয়ার অধিকারই না থাকলে মানুষের ক্ষোভ প্রকাশের বাহন হয়ে ওঠে ভিন্নমতাবলম্বীরা। কাজেই আমার মতো কারও প্রতি প্রশংসা যতটা না আমার কৃতিত্ব, তার চেয়ে বেশি হচ্ছে সরকারের ব্যর্থতার প্রতিক্রিয়া।
সমালোচনা করা নিজে যে খুব উপভোগ করি তা নয়। আমারও ইচ্ছা করে সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা করতে। দুর্নীতির অভিযোগে সমালোচিত স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে সরকার সামন্ত লাল সেনের মতো একজন নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসককে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বানিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো, এটি প্রশংসা করার মতো কাজ। বিভিন্ন অভিযোগ ছিল—এমন মন্ত্রীদের মধ্যে আরও দু-একজনকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বা কম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে সরানো হয়েছে। এগুলো জেনেও ভালো লেগেছে।
তবে সবচেয়ে ভালো লেগেছে কিছুদিন আগে মেট্রোরেলে চড়ে। আমি ১৫ থেকে ২০টি দেশের মেট্রোরেলে চড়েছি। তারপরও নিজ দেশের মেট্রোরেলে চড়ে মুগ্ধ হয়েছি। রাজধানী শহরের যানজটের ভোগান্তি এবং অর্থনৈতিক মাশুল লাঘব করতে এটি বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি। এর আগে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পদ্মা সেতু আর কর্ণফুলীর টানেলে গেছি। কমবেশি সবকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ মনে হয়েছে।
এর পাশাপাশি গত ১৫ বছরে সরকার আরও কিছু ভালো কাজ করেছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অনেক সম্প্রসারণ হয়েছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি চাহিদা বহুগুণে মেটানো গেছে, বিনিয়োগবান্ধব কিছু নীতি ও বিশেষ জোন তৈরি করা হয়েছে, আইটি খাতেও উন্নতি হয়েছে। গত বছর হজ করতে গিয়ে বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনায় উন্নতি দেখে খুব ভালো লেগেছে।
এসব বলে থেমে যেতে পারলে কিছু লোক খুশি হতো, সরকার সন্তুষ্ট হতো। কিন্তু বিনা প্রশ্নে একতরফা প্রশংসা তোষামোদকারীদের কাজ। সরকারের তোষামোদকারীর অভাব নেই, বরং দিনে দিনে নানান সুবিধা পেয়ে এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এমনকি রাষ্ট্রের দায়িত্বে নিযুক্ত ব্যক্তিদেরও কেউ কেউ আইন ও আচরণবিধি ভেঙে সরকারের তোষামোদে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে।
সরকারের তোষামোদ আর মোসাহেবির তাই প্রয়োজন নেই বলে মনে করি। সরকারের প্রয়োজন বরং সমালোচনাকারীর, নির্মোহ দৃষ্টিতে ভালোমন্দ আলোচনা করতে পারে—এমন মানুষের।