খেলার মাঠের নায়করা এখন রাজনীতির ময়দানে। অংশ নিচ্ছেন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। কেউ লড়ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে। কেউ লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে।
জাহিদ আহসান রাসেল, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী
গেল তিনবারের সংসদ সদস্য
নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন গাজীপুর-২ আসনে
রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হলেও জাহিদ আহসান রাসেলের ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে যোগসূত্র দীর্ঘদিনের। ২০০৮-র জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেই ধারাবাহিকতায় দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনেও নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন। টানা দশ বছর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের পর ২০১৮ সালে মন্ত্রিপরিষদে স্থান হয় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে। এবারও নৌকার প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে আছেন রাসেল। তবে তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পেছন থেকে কাজ করছেন গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। নিজে নির্বাচন না করলেও অন্য প্রার্থীদের সমর্থন দিয়ে রাসেলকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছেন জাহাঙ্গীর।
নাজমুল হাসান পাপন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি
আবাহনী লিমিটেডের পরিচালক
নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সন্তান হলেও এর মধ্যেই সফল ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন নাজমুল হাসান পাপন। জিল্লুর রহমান ১৯তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর ২০০৯ সালে উপ-নির্বাচনে বাবার ছেড়ে দেওয়া আসনে উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন নাজমুল হাসান। পরের দুই মেয়াদেও একই আসন থেকে সংসদ সদস্য হন তিনি। এবারও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আস্থা রেখেছে নাজমুল হাসানের ওপর। এমনিতে রাজনীতি নিয়ে সেভাবে আগ্রহ নেই ওষুধ শিল্প ব্যবস্থাপনা পেশায় জড়িত নাজমুল হাসানের। বরং দেশের ক্রিকেট নিয়ে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন। তার আমলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে অনেক। তবে নানা কারণে নিয়মিতই সমালোচিতও হতে হয় তাকে।
আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সাবেক ফুটবলার, বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি
দুবারের সংসদ সদস্য নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন খুলনা-৪ আসনে
খেলোয়াড় পরিচয় কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন আব্দুস সালাম মুর্শেদী। পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজেএমইএর একাধিকবারের সভাপতি। সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন ২০১৮ সালে। খুলনা-৪ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হন। এবারও তিনি লড়ছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। তবে এবার তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে মাঠে আছেন খুলনা ক্রীড়াঙ্গনের পরিচিত মুখ এস এম মোর্তজা রশিদী দারা। এছাড়াও আছেন আরও ৯ প্রার্থী। কেটলি প্রতীক নিয়ে দারাই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ফুটবল ফেডারেশনের চারবারের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদীর। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সংসদ সদস্য হওয়ার পর এলাকার মানুষের খোঁজখবর নেননি সালাম। তাই নৌকা প্রতীক নিয়েও খুব বেশি নিঃসংশয় থাকতে পারছেন না তিনি।
মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক
ক্রীড়া সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন নড়াইল-২ আসনে
খেলতে খেলতেই ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচন হন তখনকার জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। সক্রিয় রাজনীতি সেখান থেকেই শুরু। এরপর থেকে সংসদীয় এলাকায় নানা উন্নয়নমূলক কাজ করে প্রশংসা পেয়েছেন। তাই এবারও তাকে সেই আসনে বানানো হয়েছে নৌকার মাঝি। ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে এবারের নির্বাচনে সেভাবে তাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো তেমন কেউ নেই। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একজন ছিলেন। তবে মাশরাফীকে সমর্থন জানিয়ে বুধবার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ ফয়জুল আমির লিটু। ফলে নড়াইল-২ আসন থেকে মাশরাফীর দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হওয়া অনেকটাই সুনিশ্চিত।
সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ, নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন মাগুরা-১ আসনে
খেলোয়াড় থাকাবস্থায় সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন দেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। জাতীয় দলের অধিনায়ক এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে লড়ছেন মাগুরা-২ আসনে। ক্রিকেট দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা পাওয়া এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার এবার চাচ্ছেন রাজনৈতিক ময়দানে মুন্সিয়ানা দেখাতে। মাগুরা-২ আসনের ৪ লাখের বেশি ভোটারের মন জয় করতে এরমধ্যেই ব্যপক গণসংযোগ চালাচ্ছেন সাকিব। মাশরাফীর মতো এলাকায় সেভাবে জনপ্রিয়তা না থাকলেও নির্বাচনের মাঠে তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো কেউ নেই। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের জায়গায় সাকিবকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। বলতে গেলে তাকে চ্যালেঞ্জ দেওয়ার মতো কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীই নেই।