ভাবে মূর্তি ভঙ্গিতে হস্তী

দেশ রূপান্তর মোস্তফা কামাল প্রকাশিত: ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:৪০

ধারে-ভারে তারা মহীয়ান-গরিয়ান। ভাবমূর্তিতে বলবান-আগোয়ান। জনদরদি-জননেতা তো বটেই। আগামী দিনকয়েকের মধ্যেই তাদের নামের সঙ্গে মাননীয়-মহোদয়সহ কত বিশেষায়িত শব্দ লেগে যাবে। কারও কারও নামের সঙ্গে তা আছে গত টানা ১৫ বছর বা আরও আগে থেকেই। তাই বলে নতুন করে আবার আইনপ্রণেতা হওয়ার আগে আইনের ফাঁকে বা আইনের নামে সম্পদের হলফনামা দেখানোর যে কাণ্ডকীর্তি তারা দেখালেন তা কি চলতেই থাকবে? এ তামাশার লাগামে টান না হোক, অন্তত একটু টোকাও দেওয়া যাবে না?   


কোটিপতি হওয়া, আয়-সম্পদ বৃদ্ধি মোটেই দোষের নয়। অপরাধ বা বেআইনি কাজ নয়। কোটিপতি ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না, এমন কোনো নিষেধাজ্ঞাও নেই। কিন্তু, রাজনীতিতে ভিড়লে আলাদীনের চেরাগ পাওয়ার ম্যাজিকটা বাকিদের জানাতে সমস্যা কী? তাদের কি এ তথ্যটুকু জানার অধিকারও থাকতে নেই? দেশের অর্থনৈতিক টানাপড়েন, ডলার সংকট, দুর্ভিক্ষের শঙ্কা, মিতব্যয়ী হওয়ার রাষ্ট্রীয় আহ্বানের মাঝে মহাশয়দের সম্পদ-সম্পত্তি শত-হাজার গুণ বৃদ্ধির কেরামতি অন্যরা জানলে কী সমস্যা হবে?  


না, আইনে বা বিধানে তেমন বাধা নেই। বরং হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে বা তথ্য গোপন করা ফৌজদারি অপরাধের আওতাভুক্ত। কিন্তু এ অপরাধে কারও মনোনয়ন বাতিল বা ন্যূনতম শাস্তির তথ্য নেই। এর কারণ নির্বাচনওয়ালারা ভিআইপি। তাদের শান-মান-মর্যাদা ব্যাপক। তাদের দেওয়া বা দেখানো হিসাব নিয়ে টানাটানি করা মস্ত বেয়াদবি। তাদের ইমেজে টোকা পড়া মানে রাষ্ট্রের ইজ্জত। স্বপ্রণোদিতভাবে নিজেদের ক্ষমতাবলেই হলফনামা নিয়ে কাজ করতে পারে দুদক। সেই ক্ষমতা বলেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের সময় কয়েকজন প্রার্থীর হলফনামায় দেওয়া তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর দুদক তাদের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে পড়ে চুপ মেরে যায়।


গত কয়েকটি নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামায় দেখানো সম্পদের হিসাব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হলেও তা বেশি দিন বা বেশি দূর গড়ায় না। সম্পদের তারায় তারায় খচিতদের শুধু প্রদর্শিত হিসাব যাচাই বা খতিয়ে দেখার দরকারও মনে করা হয় না। কারণ তারা উচ্চমার্গের বরেণ্য। ভাবের সঙ্গে ভঙ্গি অনেক। ইমেজ-মর্যাদার হস্তি। তাই তাদের সম্পদের পরিমাণ বাড়ছে গাণিতিক-জ্যামিতিক সব সীমা ছাড়িয়ে। কারও কারও নিজের নামে সম্পদ দেড়-দুগুণ বাড়লেও স্ত্রীদের বেড়েছে ৫০-৬০ গুণ পর্যন্ত। তাও কেবল তাদের দেখানো হিসাবে। অদেখানোটা তো অজানাই। ট্র্যাজেডি হচ্ছে, এটা বেআইনি নয়, আইন বা বিধি মতোই সম্পদ দেখানোর এ কাজটা তারা করেন। আইনের চেয়ে এখানে নৈতিকতার প্রশ্নটি মুখ্য। কোনো কোনো সম্পদওয়ালার হিসাব গুণ অঙ্কেও অকুলান। তাদের সম্পদ বৃদ্ধির হিসাব কষতে গেলে বর্গফলের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। শরণাপন্ন হতে হয় ক্যালকুলাসের। অস্থাবর সম্পদের ভিত্তিতে এবারের নির্বাচনে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা রেকর্ড গড়েছে। এক দশক আগে দশম সংসদ নির্বাচনে কোটিপতি প্রার্থী ছিলেন ২০২ জন। এবারের নির্বাচনে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা ৫৭১ জন। এত কোটিপতি প্রার্থী অতীতের কোনো নির্বাচনেই ছিলেন না। এবার সম্পদে সবার ওপরে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, তার সম্পদ ১ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকার বেশি।


এক মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর বিদেশে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকার ব্যবসাসহ কারও কারও সম্পদ স্ফীতির কিছু কিছু নমুনা কল্পনাকেও হার মানায়। ওই মন্ত্রীর নামে বিদেশে একাধিক কোম্পানি থাকার তথ্য হলফনামায় দেখানো হয়নি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির তথ্য বলছে, ১০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ আছে ১৮ প্রার্থীর। গত ১৫ বছরে খাদ্যমন্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ৯৮ গুণ। এটি সম্পদের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ৪০ শতাংশের কাছাকাছি। এই একই সময়ে বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ খাদ্যমন্ত্রীর সম্পদ বৃদ্ধির হার জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধির ৬ গুণের বেশি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us