নতুন বছর নিয়ে এসেছে একটি জাতীয় নির্বাচন–যা মোটেও বিতর্কমুক্ত নয়। বিতর্ক অবশ্য নিত্যসঙ্গী, বিশেষ করে আমাদের রাজনীতিতে। এ দেশে সবচেয়ে কম বিতর্কিত নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়। তাই বলে কি ‘কম বিতর্কিত’ নির্বাচনের চেষ্টাও করব না? সেটা অবশ্যই করতে হবে। পরপর দুটি খারাপ নির্বাচনের লজ্জা থেকে বেরিয়ে আসতে এবার একটি ভালো নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি অবশ্য দেওয়া হয়েছিল। এর বদলে যে আয়োজন লক্ষ করা যাচ্ছে, তা আন্তর্জাতিকভাবেও আমাদের ভাবমূর্তি বাড়াবে না।
এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিপুল আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ প্রশ্নে তারা অবশ্য বিভক্ত। এর পেছনে মূল্যবোধের উপাদান কতখানি রয়েছে আর কতখানি ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ, সেই প্রশ্নও জোরালো। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রয়েছে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ আর সেটা হারিয়ে গেলে চলবে না।
যে কারণেই হোক, নির্বাচনে প্রধান সব রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে না। নির্বাচন বর্জনকারী পক্ষ এটা প্রতিহত করার চেষ্টাও চালাচ্ছে।তবে সেটা প্রবল হবে বলে মনে হয় না। ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন করার চেষ্টায় এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের ভেতর থেকেই একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটাকে অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও ‘সংঘাতের আয়োজন’ বলে মনে করছেন অনেকে। পুরোনো বছরের শেষ ও নতুন বছর শুরুর এ সময়টায় রোজ মিডিয়ায় থাকছে কোথাও না কোথাও নির্বাচন ঘিরে সহিংসতার খবর। এতে পিঠাপুলির এ সময়টায় অনেক ক্ষেত্রে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে অশান্তি।
এ দেশে প্রধান সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে মানসম্মত নির্বাচন করার দৃষ্টান্ত কিন্তু রয়েছে। তাতে আমাদের গণতন্ত্রের গৌরব বেড়েছিল। তবে নির্বাচন মানসম্পন্ন হলেও এর ভেতর দিয়ে সুশাসন আসেনি। গণতন্ত্রের চর্চাও প্রত্যাশামতো বাড়েনি। কিন্তু এ সমস্যার কথা তুলে তো মানহীন নির্বাচনের দিকে চলে যাওয়া যাবে না। একের পর এক যে ধরনের নির্বাচন হচ্ছে–তাতে এমন শঙ্কা দানা বেঁধে উঠেছে যে আমরা বুঝি স্থায়ীভাবে ঢুকে পড়ছি একপক্ষীয় নির্বাচনের গহ্বরে।