নতুন বছর আসছে। প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ কিরিবাতিতে প্রথম সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে নতুন বছরের সূচনা হবে। ধীরে ধীরে নতুন বছরের সূর্যালোক ছড়িয়ে পড়তে থাকবে পশ্চিম দিকে। পূর্ব গোলার্ধ আলোকিত করে সূর্য কিরণের ছটা ছড়িয়ে পড়বে পশ্চিম গোলার্ধে। দুনিয়ার দেশে দেশে আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেবে বিশ্ববাসী। যে কোনো নতুনের আগমন মানুষকে উদ্বেলিত করে, আহ্লাদিত করে। কিন্তু সে উদ্বেলিত ভাব কতটা স্থায়ী হবে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না। যুদ্ধ, বিগ্রহ, অর্থনৈতিক মন্দা, রোগব্যাধির সংক্রমণ, জলবায়ুর যথেচ্ছাচার পৃথিবীবাসীকে খুব আনন্দে রাখেনি। দুঃখ-বেদনায় জর্জরিত হওয়ার অনেক কারণ আছে। তবু মানুষ আশাবাদী হতে চায়। বিশ্বাসের সঙ্গে বুক বেঁধে আস্থাশীল চিত্তে ভবিষ্যতের দিনগুলো ভালোই কাটবে বলে ভাবতে চায় মর্ত্যলোকের মানুষ। আশাবাদী হওয়াই মানুষের ধর্ম। আশা না থাকলে এই পৃথিবীর বুকে মানুষ বাঁচতে পারত না। শিশুসন্তানকে হারিয়ে মানুষ অশ্রু ঝরায়। তারপরও সেই বেদনা ভুলে গিয়ে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্ন দেখাটা মানুষের চিরন্তন অভ্যাস। মার্টিন লুথার কিং বলেছিলেন, ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’। তাঁর মতো করে সব মানুষ খুব বড় না হলেও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক স্বপ্ন দেখে; যার মাথার ওপর চাল নেই, সে স্বপ্ন দেখে একদিন তার একটি পর্ণকুটির হবে।
বর্তমান পৃথিবীতে আটশ কোটি মানুষের বাস। অনেক বিজ্ঞানী গবেষণা করে দেখেছেন পুরুষ মানুষের ডিএনএতে পরিবর্তন আসছে, যার ফলে সন্তান উৎপাদন দারুণভাবে ব্যাহত হতে পারে। ফলে আটশ কোটি মানুষের এই পৃথিবী এখন যতই জনাকীর্ণ মনে হোক না কেন একদিন ভয়াবহভাবে জনশূন্য হয়ে পড়তে পারে। প্রকৃতির এই অদ্ভুত খেয়ালের কাছে মানুষ বড় অসহায়। যুগের পর যুগ কেটে গেছে, তার সমান্তরালে কেটেছে অনেক জনমিতিক উত্তরণ। জনমিতিক উত্তরণের অনিশ্চিত খেয়ালে যদি পরিস্থিতি বিপরীতমুখী হতে শুরু করে তাহলে হয়তো আমাদের এই পৃথিবী ধনধান্য পুষ্পে ভরে উঠবে। গাছের শাখায় পাখি আবার গান গাইবে, নদীতে স্রোত ফিরে আসবে। নতুন যুগের প্রযুক্তিহীন মাঝি হয়তো আবার ভাটিয়ালি গানে দুই পাড়ের মানুষকে মুগ্ধ করে তুলবে। আমরা জানতাম, ‘নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস,/ ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস।’ এই সুখ-অসুখের দ্বন্দ্বে দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে অশান্তি-সংঘাত লেগে থাকত। এক পাড়ের মানুষ অপর পাড়ের মানুষকে ঘৃণা ও ক্রোধের চোখে দেখত। আমরা আশা করব নতুন যুগের মাঝির গান এই দুই কূলের মানুষের মধ্যে যে অসূয়া ও দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে তার অবসান ঘটাবে। এমন এক পৃথিবী গড়ে উঠবে, যেখানে যত সুখ-সমৃদ্ধি সবাই ভাগ করে নেবে। ‘দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে/ যাবে না ফিরে।’
বর্তমান বিশ্বে যে ক’টি তপ্ত অকুস্থল রয়েছে তার মধ্যে অবস্থান করছে ফিলিস্তিন, ইউক্রেন ও দক্ষিণ চীন সাগর। ইউক্রেন সম্পর্কে পাশ্চাত্য শক্তিগুলো শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তে এসেছে ইউক্রেনকে রক্ষা করা যাবে না। সুতরাং ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক সমাধানটি আশা করা যায়, তা হলো এক ধরনের জাতিসংঘভিত্তিক অছি ব্যবস্থা। মজার ব্যাপার হলো, সোভিয়েত রাশিয়ার দুর্দণ্ড প্রতাপশালী প্রেসিডেন্ট লিওনিদ ইলিচ ব্রেজনেভ ইউক্রেনের নাগরিক ছিলেন। এ থেকে বোঝা যায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের বন্ধন কত শক্তিশালী। এই বন্ধন ছিন্ন করার যে কোনো চেষ্টা নিঃসন্দেহে রক্তপাতের সূচনা করবে। রক্তপাতের মাধ্যমেই এই বন্ধন পুনরুদ্ধার হবে। হয়তো আসছে বছর এই বন্ধন নতুন করে প্রতিষ্ঠিত হবে। দুঃখজনক রক্তপাতের অবসান হবে। ইউক্রেন বিশ্বসভ্যতাকে অনেক কিছু দিয়েছে। ইউক্রেনের সমুদ্রজাহাজ ও উড়োজাহাজ শিল্প খুবই উন্নত হয়ে উঠেছিল। ইউক্রেন বিশ্বের অন্যতম শস্যভান্ডার। তাই বিশ্বকে দেবার অনেক কিছুই আছে ইউক্রেনের। আমরা স্বপ্ন দেখি ইউক্রেনে যে কোনো মূল্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ইউক্রেন পৃথিবীকে যা দিতে পারে তা দিয়ে সবার প্রত্যাশা পূরণ করবে। বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন নিয়ে যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, ইউক্রেন সমস্যার সমাধান হলে সেই আশঙ্কার কালো মেঘ কেটে যাবে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আশা প্রকাশ করেছেন, তাইওয়ান শান্তিপূর্ণভাবে চীনের সঙ্গে মিলিত হবে। ১৯৪৯-এর বিপ্লবপূর্ব চীনে তাইওয়ান ও চীন মূল ভূখণ্ডের একই রাষ্ট্র ছিল। চীনের দক্ষিণপন্থি কুওমিংটাং শাসকরা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে বিপ্লবী যুদ্ধে পরাজিত হয়ে অবশিষ্ট সৈন্যসামন্ত ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাইওয়ানে আশ্রয় নেয়।