দেশ রূপান্তর : ৭ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে অনেক সংশয় না কাটলেও নির্বাচনের আয়োজন তো এখন প্রায় চূড়ান্ত। এর পরের সিকোয়েন্সটা কী রকম হতে পারে?
তোফায়েল আহমেদ : সিকোয়েন্স আর কী, নির্বাচন হবে, আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবে। এখন বিরোধী দল কে হবে সেটা নিয়েই অনিশ্চয়তা। সরকার অবশ্য ঠিক করে দিয়েছে বিরোধী দল হওয়ার দুই-তিনটা অল্টারনেটিভ আছে। জাতীয় পার্টি, তারা না হলে স্বতন্ত্র। মোটামুটি এখন পর্যন্ত নির্বাচন নিশ্চিত হয়েছে, সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। পাশাপাশি যেভাবে বিরোধী দলকে ভাবা হচ্ছে, তাতে আমাদের দেশে বিরোধী দল নামের কনসেপ্ট বা ধারণা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। পার্লামেন্টারি বা ওয়েস্ট মিনস্টার টাইপ ডেমোক্রেসিতে পাখির যেমন দুটি ডানা থাকে, ফলে সে উড়তে পারে তেমনি বিরোধী দল এবং সরকারি দল সংসদে থাকলে তখন সংসদটা কার্যকরী থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের সংসদে এটা দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত। মোর অর লেস, ২০১৪ সাল থেকে এটা অনুপস্থিত। দুঃখজনক যে, এই নির্বাচনেও যে কোনো বিরোধী দল থাকবে বা আছে, সেটা দেখা যাচ্ছে না। নামে একটা বিরোধী দল থাকবে এবং সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে। যেমন রওশন এরশাদ ভোগ করেছেন। কিন্তু তারা বিরোদী দলের কোনো ভূমিকা পালন করেননি। এবারও তেমন, এটাই বোধহয় আমাদের নির্বাচনের ফেইট।
দেশ রূপান্তর : বছরজুড়েই তো নির্বাচন নিয়ে একটা টানাপড়েন চলছিল। সেক্ষেত্রে, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়া মাত্র তফসিল ঘোষণায় ইসি কি তাড়াহুড়ো করেছে?
তোফায়েল আহমেদ : সেই অর্থে তাড়াহুড়া দেখি না, কারণ, তারা তো তাদের চাকরি করেন। আমাদের নির্বাচন কমিশন ওই রকম ইন্ডিপেন্ডেন্ট কমিশনের চরিত্রে আসেনি। তারা একটা চাকরি পেয়েছেন, তাও চাকরি চলে যাওয়ার মানে অবসরের পরে আর তারা চাকরিটাই করেন। সুতরাং তারা স্বাভাবিক নিয়মেই চাকরি করার নিয়মনীতি অনুসরণ করেছেন। যেটাকে তারা নাম দিয়েছেন- সংবিধান রক্ষার জন্য এটা করছি। দেশের নির্বাচনী সমস্যা, সংকটের সমাধানে কমিশন নামের প্রতিষ্ঠানটি যদি স্বাধীন হয় তাহলে যেমন ঝুঁকি গ্রহণ করার কথা, দায়িত্ব গ্রহণ করার কথা সেটা তো তারা করেননি। তারা স্বাভাবিক নিয়মে, স্বাভাবিক চাকুরের মতো, চাকরিজীবীর মতো চাকরি করছেন। তাদের মধ্যে তেমন বড় কাজের বাসনাও ছিল না। সুতরাং, তফসিল ঘোষণায় তারা তাড়াহুড়ো করেছেন, সেটা আমি বলব না।
দেশ রূপান্তর : তফসিল ঘোষণার পরও নির্বাচন পেছানোর কথাও উঠেছিল, ক্ষমতাসীন দল ও ইসিও বলেছিল। কিন্তু সে আলাপ পেছনে পড়ে গিয়েছে। ইসি কি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য আন্তরিক ছিল?
তোফায়েল আহমেদ : এখানে ইসির ভূমিকাটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ না। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত তো ইসি নিতে পারবে না। কিন্তু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত সঠিক হওয়ার ক্ষেত্রে ইসির কিছু চাপ সৃষ্টির ক্ষমতা ছিল। সেগুলো তারা প্রয়োগ করেনি। তারা সেদিকে যাই-ই নি। আরেকটা হচ্ছে অংশগ্রহণমূলক যে শব্দটা, তার ডেফিনেশন কী? এর ডেফিনেশনের মধ্যে ভুল আছে। আর আমি নির্বাচন পিছিয়ে দেব, যদি তারা আসে এটা কি ‘আর একবার সাধিলে খাইব’ ধরনের বিষয়? নিশ্চয়ই জিনিসটা তেমন না। এটা দেশের নির্বাচনব্যবস্থার ক্ষেত্রে একটা মৌলিক প্রশ্ন। যে প্রশ্নের সমাধান গত দুই নির্বাচনে হয়নি। সুতরাং এবার যে আবার সাধিলে খাইব, মানে নির্বাচন পিছিয়ে দেব এসব ছেলেখেলা। এগুলো সমস্যা সমাধানের কোনো সঠিক পদক্ষেপ না।