নির্বাচনের মতো ব্যাপার তো ঘটতে যাচ্ছে ৭ জানুয়ারি ২০২৪। নানাদিক বিবেচনায় আর দশটা সাধারণ নির্বাচনের মতো নয় এইবারের নির্বাচন। একদিকে ক্ষমতাসীন দলের মাথায় চিন্তা, যেকোনো প্রকারেই ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে, দেখাতে হবে নির্বাচন সার্বিক বিচারে সুষ্ঠু হয়েছে, প্রতিযোগিতামূলক হয়েছে।
এটা দেখাতে না পারলেও আইনগতভাবে নির্বাচন তো বৈধই থেকে যাবে, কিন্তু একটা নৈতিক সমস্যা হতে পারে। দেশে-বিদেশে লোকে বলবে যে আওয়ামী লীগ ভোটারবিহীন একটা নির্বাচন করে ক্ষমতার রয়ে গেছে। এই নৈতিক বৈধতা নেহায়েত কথার কথা নয়, এর নানাপ্রকার প্রায়োগিক দিকও আছে।
রাজনৈতিক শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার নানা পন্থা আছে, নির্বাচন তার মধ্যে একটা, আরেকটা হচ্ছে বিপ্লব বা অভ্যুত্থান ইত্যাদি। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত শক্তিটি যখন জনগণের জন্য আইন প্রণয়ন করে সেই আইনের বৈধতা নির্ভর করে ক্ষমতাসীনদের বৈধতার ওপর। আর সেই বৈধতা কেবল কানুনই বৈধতা হলেই হয় না, তা হতে হয় কার্যকর এবং গ্রহণযোগ্য।
কার্যকর মানে কী? মানে রাষ্ট্রের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে, আর গ্রহণযোগ্যতা হচ্ছে—যেটা আমরা বলছি নৈতিক বৈধতা। এইসব কারণে সরকারি দল নানারকম বন্দোবস্ত গ্রহণ করেছে যাতে নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যাও যুক্তিসঙ্গত মাত্রায় থাকে আর ভোটারও যেন বেশি বেশি কেন্দ্রে আসে।
আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার দিন শেখ হাসিনা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সবাইকে ডেকেছেন, ডেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। সেইসব নির্দেশনার মধ্যে একটা নির্দেশনা ছিল কোনো প্রার্থী যেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে না আসে, প্রত্যেক প্রার্থীকেই অন্তত একজন ডামি প্রার্থী রাখতে হবে।
আরেকটা নির্দেশনা ছিল যে, যারা দলের নমিনেশন পাবেন না তারা চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারবে, সেই ক্ষেত্রে দল তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে না। বোঝাই যাচ্ছে, ঐ যে প্রথমেই বলেছি, নির্বাচন যেন কোনোভাবেই একটা পাতানো বা একতরফা দেখতে না হয় সেইটাই হচ্ছে অভীষ্ট লক্ষ্য।
কায়দাটা যে বেশ কার্যকর তা তো বোঝাই যাচ্ছে। একটা আসনে যদি সাতজন বা আটজন প্রার্থী থাকে, মোট ভোটারের অর্ধেকের মতো যদি ভোট দিতে আসে, সেই নির্বাচন নিয়ে তো প্রশ্ন তোলা কঠিন। আর এখন পর্যন্ত যা দেখা গেছে, প্রতিটা আসনে গড়ে নয়জনের মতো প্রার্থী থাকতে পারে।