রাজনীতিবিদরা মুখে বলেন, তারা জনগণের জন্য রাজনীতি করেন। জনগণের ভোটেই তারা ক্ষমতায় যেতে চান। কিন্তু বাস্তবে তারা জনগণকে থোড়াই কেয়ার করেন। বরং জনগণকে জিম্মি করেই তারা ক্ষমতায় যেতে চান। দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলছে। সরকারি দল সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো বর্তমান সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো নির্ধারিত সময়ে তফসিল ঘোষণা করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা; মাঠ সমতল রাখা। কারা নির্বাচনে আসবে না আসবে সেটা নিশ্চিত করা। কোন দল খেলায় অংশ নেবে, কোন দল ওয়াকওভার দেবে; সেটা দেখা রেফারির দায়িত্ব নয়। আবার কোন দল খেলায় অংশ নেবে না বা নির্বাচন বয়কট করবে; সেটা তাদের অধিকার। বিএনপিরও নির্বাচন বয়কট করার, সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করার সাংবিধানিক অধিকার আছে। কিন্তু সেই সাংবিধানিক অধিকারেরও কিছু শর্ত আছে। আপনি মানুষের জীবনকে জিম্মি করে, সম্পদ নষ্ট করে, গাড়িতে আগুন দিয়ে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে আন্দোলন করতে পারবেন না।
তবে বাংলাদেশে আন্দোলন সম্পর্কে ধারণাটাই উল্টো। এখানে লাখো লোকের সমাবেশকেও আন্দোলন হিসেবে গণ্য করা হয় না। জ্বালাও-পোড়াও মানেই এখানে কঠোর আন্দোলন। জনগণকে যত বেশি কষ্ট দেওয়া যায়, আন্দোলন যেন তত সফল। যুগ যুগ ধরে আন্দোলনের এ স্টাইলই চলে আসছে বাংলাদেশে। একসময় আওয়ামী লীগ-বিএনপি মিলে স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। এরপর বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছে। এখন যেমন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপি আন্দোলন করছে। তবে সময় এসেছে, আন্দোলনের নামে জনগণকে জিম্মি করার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসার।
অন্য সব কথা বাদ দিলাম, রাজনীতিবিদদের ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলনের নামে যে আমরা গোটা জাতিকেই পঙ্গু করে দিচ্ছি, সেটা কী আমাদের মাথায় আছে। এখন চলছে নভেম্বর মাস। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন পরীক্ষার ব্যস্ততা। নির্বাচনের বছর বলে এবার একটু আগেভাগে পরীক্ষা শেষ করে ফেলার প্রস্তুতি ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর। কিন্তু গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে দেশ চলে গেছে উল্টো রুটিনে।