স্মরণ করা যেতে পারে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে ভোট ছাড়া কোনো প্রার্থী যে জিতেছেন, এমনটা কেউ বলতে পারবেন না; সবাই বিপুলসংখ্যক ভোট পেয়ে জিতেছেন, তবে ভোট দিতে ভোটারদের দিনের আলোয় ভোটকেন্দ্রে যেতে হয়নি, তাঁদের পরিশ্রম লাঘব করতে প্রশাসনের লোকেরা আগের রাতেই ভোটের বাক্স ভরে দিয়েছেন। এমনকি নির্বাচন কমিশনের প্রধান পর্যন্ত একটি বেফাঁস মন্তব্যে ঘটনার সত্যতা ফাঁস করে দিয়েছিলেন। শাক দিয়ে মাছ ঢাকা একটি ইতিহাসপ্রসিদ্ধ রীতি বটে; কিন্তু মাছের সাইজ যদি বেখাপ্পা রকমের বড় হয়, তবে বেচারা শাকদের অসুবিধা ঘটে, মাছের সর্বাংশ ঢেকে রাখতে তারা ব্যর্থ হয়। এ ক্ষেত্রে তেমনটাই ঘটেছিল।
বাংলাদেশের বড় মাপের মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র আঁধার রাতের ওই নির্বাচন যে মেনে নেয়নি তা নয়, মেনে নিয়েছিল। কারণ মেনে না নিলে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে অসুবিধা, কিন্তু তবু তাদের স্টেট ডিপার্টমেন্ট চক্ষুলজ্জার খাতিরে হলেও নিজেদের বিশ্ব মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশ পরিস্থিতির মূল্যায়নে বিরূপ মন্তব্য না করে পারেনি। মন্তব্যটা এ রকমের, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগ গত ডিসেম্বর মাসে অকল্পনীয় একপেশে সংসদীয় নির্বাচনের মাধ্যমে পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য টানা তৃতীয়বার নির্বাচিত হয়েছে। ওই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু বিবেচিত হয়নি। বিরোধী পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, জাল ভোট প্রদানসহ অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্বাচনের আগে প্রচারণার সময় হয়রানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার ও সহিংসতার কারণে বিরোধী অনেক প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকদের মিছিল-সমাবেশ ও স্বাধীনভাবে প্রচারণা কঠিন হয়ে পড়ার বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে।’ এসব পর্যবেক্ষণ মার্কিন সরকারের, তবে দেশের ভেতর থেকে আমরা যাঁরা নির্বাচনের গোটা প্রক্রিয়া দেখেছি এবং অনুভব করেছি, তাদের অভিজ্ঞতা ছিল অনেক বেশি প্রত্যক্ষ ও প্রসারিত এবং অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে এ তথ্যও দেওয়া ছিল, ‘আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের তাদের পর্যবেক্ষণ মিশন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সময়সীমার মধ্যে বাংলাদেশ “অ্যাক্রিডিশন” (অনুমতিপত্র) ও ভিসা দেয়নি।’ বলা হয়েছিল, ‘ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের ২২টি এনজিওর মধ্যে মাত্র ৭টিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।’ এটা তো মিথ্যা নয়, সারা বিশ্বের একটি দেশেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নজির কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এযাবৎ প্রমাণ করতে পারেনি। মার্কিনিদের নিজেদের দেশে মানবাধিকার দুর্দশা যা-ই হোক না কেন, অন্য দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে রাষ্ট্রটি বেশ সরব থাকে; আমাদের ব্যাপারেও বিলক্ষণ সচেতন দেখা যাচ্ছে। তাদের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে যেসব মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় তার একটা তালিকা দেওয়া হয়েছে।