২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচনের আগের রাতের ব্যাপক ব্যালট জালিয়াতির অভিযোগের কারণে পৌনে পাঁচ বছর ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দেশের বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি বিশ্বের অনেক দেশেরও কূটনৈতিক আক্রমণের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করত বলে সাধারণ ধারণা থাকলেও নির্বাচনের আগের রাতে পুলিশি প্রহরায় এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় ব্যালট বাক্সগুলো ভরে ফেলার যে ন্যক্কারজনক ঘটনাটি দেশের অধিকাংশ এলাকায় ঘটানো হয়েছিল, তার সত্যতা সম্পর্কে সিংহভাগ জনগণের মনে বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে গেড়ে বসেছে। যেভাবে এই ‘রাত্রিকালীন ব্যালট জালিয়াতি’ সম্পন্ন করে সংসদের তিন-চতুর্থাংশ আসন দখল করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট, সেটা কি এ দেশের গণতন্ত্রকে পুরোপুরি লাইনচ্যুত করে দেয়নি? এ ব্যাপারটা আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় বিরাট ধস নামিয়েছে।
অতএব, আগামী সংসদ নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য বিপর্যয় হয়তো সারা দেশে অপেক্ষা করছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনেও জালিয়াতি করার অপপ্রয়াস নেওয়া হলে আওয়ামী লীগের খবর আছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ এ রকম জালিয়াতি কোনোমতেই মেনে নেবে না। তারা ইতিমধ্যেই এ-ব্যাপারে শেখ হাসিনাকে প্রবল চাপ দিতে শুরু করেছে। এসব চাপে কাজ না হলে তাদের পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেওয়াও হতে পারে। অথচ আওয়ামী লীগের এবারের পৌনে পনেরো বছরের শাসনামলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত প্রশংসনীয় গতিশীলতা সৃষ্টির বিষয়টিকে এই নির্বাচনী-জালিয়াতির ইস্যুটি অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে। গত পৌনে পনেরো বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে বিশ্বের কাছে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হয়ে উঠেছে, সেটা কি গুরুত্ব দাবি করে না?