ঘোষণা ছিল খেলা হওয়ার। ‘খেলা হবে-খেলা হবে’র জবাবে ‘খেলবেন, আসেন খেলি’-র মাঝে খেলা কিছুটা হয়েও গেছে। ওই খেলায় পুলিশ কনস্টেবল আমিরুলের লাশ পড়েছে। যুবদলের শামীমও নিহত, যদিও পুলিশের দাবি সে যুবদল কর্মী নয়। পরপারে সাংবাদিক রফিকও। লালমনিরহাটে শ্রমিক লীগের জাহাঙ্গীর ও রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বিএনপির রশিদও এ তালিকাভুক্ত। বাদ যাননি ডেমরায় বাসের হেলপার নাঈম। নিহতদের কেউ পুলিশ, কেউ কেউ বিএনপি-লীগ; কেউ বা হেলপার। মানুষ নয়? আর খেলার প্রাপ্তিটা কেবল নিহত ও স্বজনদের। আমিরুল-শামিম-রশিদ-জাহাঙ্গীরদের স্বজনদের নিয়তি। সামনে আরও কী খেলা অপেক্ষা করছে, কে পড়বেন লাশের বাকি তালিকায়- ভালো জানেন খেলোয়াড়-আম্পায়াররাই। তারা কামিয়াব, জয়ের ধারা ধাবমান। তাদের পরাজয় নেই। মৃত্যুর সঙ্গে সাফল্যও আছে পুলিশের। সরকারের নির্দেশে তারা চোখের পলকে সামান্য সময়ের মধ্যে হাজারো লোকের মহাসমাবেশ ম্যাজিকের মতো ফাঁকা করে দিতে পারে। পারে না বাজার সিন্ডিকেটের টিকিটি স্পর্শ করতে।
তলে তলে সমঝোতা বা বোঝাপড়ার আভাসে অন্তত রক্তারক্তি না হওয়ার একটা আশা জেগেছিল জনমনে। আবার নেতানেত্রীদের বডি ল্যাংগুয়েজ, খিস্তি-ভেংচি, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, ছল-ছলনার মধ্যে শঙ্কাও ছিল। শেষতক শঙ্কাটাই বাস্তব হলো। ফিরে এলো ভয় জাগানিয়া হরতাল-অবরোধের মড়ক। আবারও রক্তের পুরনো খেলা, সহিংসতার জয়রথ। ২৮ অক্টোবরের কালো দিনে নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হতে তেমন সময় লাগেনি। স্টাইল অনেকটা হেফাজত দমনের মতো। ভ্যানু ভিন্ন। মতিঝিল টু পল্টন-কাকরাইল-ফকিরাপুল। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের আর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ। একটু দূরে আরামবাগে জামায়াতের জমায়েত। এর মধ্যেই সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসসহ নতুন করে সহিংসতার পুরনো অধ্যায়। সেদিন নয়াপল্টনে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি ছাড় দিলেও ছেড়ে দেয়নি।
এক সময় জামায়াতে ইসলামীর মুক্তাঞ্চল ছিল বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট। সেই এলাকাটিতে শান্তি সমাবেশ ডাকে আওয়ামী লীগ। আর জামায়াতে ইসলামীকে বরাদ্দ দেওয়া হয় আরামবাগে শাপলা চত্বরের কাছে মতিঝিলের একটি সড়ক। জামায়াত অনেক দিন ধরেই নিজেদের দৃশ্যমান করার সুযোগের খোঁজে ছিল। সরকারের সঙ্গে তাদের ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। সবুজ সংকেত পেয়ে তারা অনেকটা বীরত্বের সঙ্গে সমাবেশ করেছে। এর আগে, করেছে রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে। চরম দুর্দশার মধ্যেও তারা রাজনীতির মাঠে। কখনো কখনো আওয়ামী লীগ-জামায়াতকে টেক্কা দেয়। ফাঁদেও ফেলে। বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশে রাজনীতির মাঠে বড় খেলোয়াড় আওয়ামী লীগ আর বিএনপি। জাতীয় পার্টি তাল-লয় মেলায়। কিন্তু, গত ক’দিন কে কাকে ফাঁদে ফেলছে, কে কার ওপর ভর করছে তা অনেকটা ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। প্রশ্নবিদ্ধও। সরকারের বিরাগভাজন এবং সুনজরের সার্কাস শো চলছে সমানে। চিন্তা ও চরিত্রগতভাবে তাদের মধ্যে যথেষ্ট মিল। তারা কেউ অচেনা নয়। মানুষ তাদের ক্ষমতায় দেখেছে। বিরোধী দলেও দেখেছে। প্রত্যক্ষ করেছে রক্তপিপাসাও। এখানে জনগণের প্রাপ্তি-প্রত্যাশা একেবারে নগণ্য। খেয়ে না খেয়ে জনগণের একটু স্বস্তিতে বেঁচে থাকার মিনতির দুয়ারও বন্ধ প্রায়।