বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির নেতারা যতই বলুন, তাদের আন্দোলন ‘এক দফা’ বাস্তবায়ন তথা সরকার উৎখাতের কাছাকাছি চলে এসেছে, বাস্তবতা কিন্তু অন্য কথা বলছে। অন্তত তাদের সাম্প্রতিক মহাসমাবেশ এবং পরের দিনের রাজধানীর প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে সংঘটিত ঘটনাবলি দেখলে তা বোঝা যায়।
বিএনপির মহাসমাবেশটি হওয়ার কথা ছিল ২৭ জুলাই নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে যখন বলা হলো, সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে নয়াপল্টনের মতো অত্যন্ত ব্যস্ত এক রাস্তায় এ ধরনের সমাবেশ হলে জনদুর্ভোগ হবে; এটি এড়াতে বিএনপি চাইলে পরদিন শুক্রবার– সাপ্তাহিক ছুটির দিন একই স্থানে মহাসমাবেশ করতে পারে, তখন প্রায় বিনাবাক্যে বিএনপি তা মেনে নেয়। যে আন্দোলন– অন্তত বিএনপি নেতাকর্মীর ভাষায় গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিতে চলেছে; যে পরিস্থিতিতে পদত্যাগ ছাড়া সরকারের কোনো উপায় থাকার কথা নয়, সে আন্দোলনের গতিপথ সরকার দ্বারা নির্ধারিত হয় কীভাবে?
বলা হতে পারে, পুলিশের পরামর্শ না শুনে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকলে রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটতে পারত। তা ছাড়া একই সময়ে কাছাকাছি স্থানে সরকারদলীয় লোকদের সমাবেশ থাকায় অরাজক পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারত। কিন্তু সরকার তো চাইবেই যে কোনো উপায়ে এবং এমনকি মূল্যে তার অবস্থান ধরে রাখতে। আপনি পরিস্থিতিকে গণঅভ্যুত্থানের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন; মানে জনতার শক্তিতে সরকারের টিকে থাকার যে কোনো কৌশল পণ্ড করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। সে ক্ষেত্রে ব্যর্থতার অর্থ হলো, আপনি আসলে পড়েছেন মোগলের হাতে, তাই খানা খেতে হচ্ছে সাথে।
উল্লেখ্য, ১২ জুলাই একই স্থানে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে বিএনপি ‘এক দফা’ আন্দোলনের ঘোষণা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২২ জুলাই ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয় দলটির তিন অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’। সেখান থেকেই ২৭ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা আসে। এর আগে বিভাগীয় পর্যায়েও একই ধরনের তারুণ্যের সমাবেশ হয়। স্বীকার করতেই কবে– সমাবেশগুলো বিশেষত জমায়েত ও শৃঙ্খলার কারণে সবারই নজর কাড়ে। মনে হচ্ছিল, সরকারকে চূড়ান্ত ধাক্কা দেওয়ার আগে দলকে ভালোই প্রস্তুত করছে বিএনপি। তাই ২৭ জুলাইয়ের মহাসমাবেশ রাজনীতিসচেতন মহল তো বটেই, সাধারণ মানুষের মধ্যেও বেশ কৌতূহল তৈরি করে।