দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল ও জোটের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির বিরূপ প্রভাব অর্থনীতিতে পড়িবার যেই শঙ্কা ইতোমধ্যে ঘনাইয়া উঠিয়াছে, উহাকে তুড়ি মারিয়া উড়াইয়া দিবার অবকাশ নাই। আমরা জানি, রাজনীতি ও অর্থনীতি শুধু এই দেশেই পরস্পর হাত ধরিয়া চলে না। বিশ্বের উন্নত ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাগুলিতেও এই রূপ নজির বারংবার দেখা গিয়াছে।
সর্বশেষ মাত্র গত সপ্তাহে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের নিউ ইকোনমি অ্যান্ড সোসাইটির ‘বৈশ্বিক ঝুঁকি মানচিত্র’ প্রতিবেদনেও দেখা গিয়াছে, রাজনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক কারণে চলতি বৎসরের শেষার্ধে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাড়িবে বৈ কমিবে না। বস্তুত রাজনৈতিক অস্থিরতা হইতে কীভাবে আর্থসামাজিক অস্থিতিশীলতার সম্প্রসারণ ঘটে, বাংলাদেশ হইতে পারে উহার ‘উৎকৃষ্ট’ উদাহরণ। যথায় ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা ও সুশাসনের ঘাটতি এমনিতেই অর্থনীতির বোঝাস্বরূপ, তথায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার শাকের আঁটি চাপাইয়া দিলে পরিস্থিতি কী হইতে পারে, উহা বুঝিবার জন্য বিশেষজ্ঞ হইবার আবশ্যকতা নাই।
আমরা গভীর উদ্বেগের সহিত লক্ষ্য করিতেছি, সংবাদমাধ্যম, নাগরিক সমাজ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পুনঃপুন আহ্বান সত্ত্বেও ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের কর্মসূচিতে সহিংসতা পরিহার করা যাইতেছে না। শুক্র ও শনিবারের কর্মসূচির মধ্যেও রাজধানী ও উপকণ্ঠের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি বাসে অগ্নিসংযোগ ঘটিয়াছে। অনেকের ব্যক্তিগত বাহনও মারমুখী প্রতিপক্ষদ্বয়ের মধ্যখানে পড়িয়া ভাঙচুরের শিকার হইয়াছে। শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে নহে, এইরূপ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের সংস্থাগত কিংবা রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অর্থনৈতিক মূল্য কম নহে।