টান টান উত্তেজনায় গতকাল শুক্রবারটি পার হল নগরবাসীর। বিএনপি ও সমমনা দলসমূহ এবং আওয়ামী লীগের পালটাপাল্টি সমাবেশ বড় অঘটন ছাড়াই শেষ হয়েছে। ‘খেলা হবে’ বলে সেখানে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে কেউ হারেনি বা জিতেনি। তবে বেলা শেষে আত্মঘাতি গোল খাওয়ার মতো আওয়ামী লীগের নিজস্ব কোন্দলে একজনের প্রাণ গেছে।
দু’পক্ষের বক্তব্যেই উত্তেজনা ছিল। আবারও বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বলেছেন, ‘যদি নিজেদের ভালো চান, এখনো সময় আছে। আমাদের এক দফা দাবি, সেটা মেনে নিন আর পদত্যাগ করুন’। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজেদের সমাবেশে বলেছেন, বিএনপির সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন নয়াপল্টনের কাদাপানিতে আটকে গেছে। বলেছেন, বিএনপির এক দফা খাদে পড়ে গেছে এবং এই এক দফা কোনো দিন বিএনপির ক্ষমতার স্বাদ পূরণ করতে পারবে না। উভয়পক্ষই আজ শনিবার শনিবার রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে ঘেরাও ও শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে।
বুঝতে আসুবিধা হচ্ছে না যে পরিস্থিতি সংঘাতময় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সহিংসতা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এক রাজনৈতিক সংস্কৃতি যেটা প্রতি পাঁচ বছর পর পর জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এলে প্রকট আকার নেয়। বিরোধী পক্ষ যখন বলে কোনো আলোচনা নয়, রাজপথেই ফায়সালা হবে এবং সরকারি দল যখন বলে রাজপথে জবাব দেয়া হবে তখন সেটা অবশ্যই সহিংস রাজনীতি। আধিপত্য কায়েমের এই ব্যবস্থার মধ্যেই নিহিত আছে সংঘাত, যাকে বলা যায় ‘সিস্টেমেটিক ভায়োলেন্স’।
বিএনপি সমাবেশ ডেকেছিল ২৭ জুলাই। আওয়ামী লীগও ডাকল একই দিনে। বিএনপি একদিন পিছিয়ে ২৮ জুলাই করল, আওয়ামী লীগও পিছিয়ে একদিন পরে আনলো। এই পাল্টাপাল্টি মানুষের মনে ভয়ের উদ্রেক করছে। অস্বাভাবিক দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত মানুষ এমন হিংসাত্মক রাজনীতিতে উদ্বিগ্ন। আওয়ামী লীগ তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে যে, বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলায় কঠোর অবস্থানে থাকবে ক্ষমতাসীন দলটি। রাজধানী ঢাকা নিজেদের কবজায় রাখতে কোনোভাবেই বিএনপিকে ছাড় দেবে না ক্ষমতাসীনরা। এক দিকে সরকারিভাবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তৎপর থাকবে; অন্যদিকে বিএনপির মহাসমাবেশের বিপরীতে পাল্টা সমাবেশের মাধ্যমে পুরো শক্তি নিয়ে রাজপথে সক্রিয় থাকবে নেতাকর্মীরা। সরকারবিরোধীরা সরকার পতনের জন্য কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে পাল্টা প্রতিহত করার জন্যও দলীয়ভাবে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে।