যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্যের মতো বাংলাদেশেও একটি দ্বিদলীয় ব্যবস্থা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা ছিল। নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বিজয়ের পর জাতীয় সংসদের চারটি নির্বাচনের ফলাফল দেখে জনমনে সে রকম ধারণাই হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বিএনপি প্রধান বিরোধী দল হবে আর বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে আওয়ামী লীগ হবে প্রধান বিরোধী দল। সমানে সমান লড়াই। গণতন্ত্র পুনর্গঠনেও তারা একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে পারত। কিন্তু কার পাপে সেটি হয়নি, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে মহাতর্ক আছে। এক–এগারোর পালাবদলের জন্য যদি বিএনপি দায়ী হয়ে থাকে, বর্তমানে নির্বাচন নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তার দায়ও আওয়ামী লীগ এড়াতে পারে না।
মোদ্দাকথা, আমাদের রাজনীতিটা সুস্থ ধারায় চলছে না। গণতন্ত্রও ঠিকমতো কাজ করছে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে যে ন্যূনতম কর্মসম্পর্ক থাকে, বাংলাদেশে সেটা প্রায় অনুপস্থিত। রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের ধ্বংসের মধ্য দিয়ে নিজেদের জয় নিশ্চিত করতে চায়। অথচ গণতন্ত্রের মূল কথা হলো পরমতসহিষ্ণুতা, ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা।
আওয়ামী লীগ একটানা সাড়ে ১৪ বছর ক্ষমতায়। নেতাদের দাবি, তাঁরা সত্যিকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি সমূলে উৎপাটন করেছেন। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু গত ১৪/১৫ বছরে দেশে মৌলবাদী ও ধর্মবাদী রাজনীতির প্রসার ঘটল কীভাবে?
ডেইলি স্টার-এর অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৮ সালে জামায়াতের স্থায়ী সদস্য বা রুকনের সংখ্যা ছিল ২৩ হাজার ৮৬৩। পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বর্তমানে দলটির স্থায়ী সদস্য ৩ গুণ বেড়ে ৭৩ হাজার ৪৬ জনে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, একই সময়ে এই দলের কর্মীর সংখ্যা আগের ২ লাখ ২১ হাজার থেকে ৩ গুণ বেড়ে ৬ লাখ ৩৯ হাজার হয়েছে। জামায়াতের নথির তথ্য অনুযায়ী, তাদের নারী রুকনের সংখ্যা প্রায় ৫ গুণ বেড়েছে এবং নারী কর্মী বেড়েছে ৪ গুণ। একইভাবে ২০০৮ সালে দলের সহযোগী সদস্য ১ কোটি ৩ লাখ থাকলেও এখন তা বেড়ে ২ কোটি ২৯ লাখে দাঁড়িয়েছে।