অবশেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য বুলিং ও র্যাগিং নীতিমালা জারি করেছে সরকার। দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেভাবে এসব সামাজিক অপরাধের বিস্তৃতি ঘটেছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধে নীতিমালার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। চলতি মাসের শুরুতে জারিকৃত নীতিমালায় বলা হয়েছে– প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিন থেকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি থাকবে। কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী; এমনকি পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে এ-সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রচলিত বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
২০২১ সালের আগস্ট মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং রোধে নীতিমালার জন্য হাইকোর্টের রুল জারি হয়। ওই বছর ঢাকার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখার দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। তার পরিবার অভিযোগ করেছে, স্কুলের সহপাঠী ও শিক্ষকদের বুলিংয়ের শিকার হওয়ার ফলস্বরূপ এই ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি মর্মান্তিক। ছেলেটির ওজন ৯৩ কেজি হওয়ায় শ্রেণিকক্ষে তাকে মোটা বলা হতো। শিক্ষার্থীরা তো বটেই, এমনকি অভিযোগ রয়েছে শিক্ষকদের বুলিংয়েরও শিকার হতো ছেলেটি। তাই সে ইন্টারনেট দেখে নিজেই ওজন কমানোর চেষ্টা করছিল। অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমাতে গিয়ে ছেলেটি অ্যানোরেক্সিয়া এবং বুলিমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। এর পর নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে অবশেষে মারা যায়। অত্যধিক মোটা বা অত্যধিক চিকন হলে সহপাঠীসহ পাড়া-প্রতিবেশী প্রায় সবার যন্ত্রণা সইতে হয়। পড়া না পারলেও হয়তো শিক্ষকের মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়– এই মোটকু, পড়া শিখিসনাই কেন? অন্যরা হয়তো ভাবে, মোটাকে মোটা বলায় কোনো দোষ নেই। কিন্তু এটাই যে বুলিং এবং এটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য কতটা মর্মপীড়ার কারণ– ওই ছেলেটির পরিণতিই তার প্রমাণ।
‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা ২০২৩’-এ পাঁচটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। মৌখিক, শারীরিক, সামাজিক, সাইবার এবং সেক্সুয়াল বা যৌন বুলিং ও র্যাগিং। এর বাইরেও অসম্মানজনক যে কোনো আচরণকে এর আওতায় আনা হয়েছে। গালাগাল করা তো বটেই; বন্ধুরা ‘দুষ্টুমি’ করে যে খারাপ নামে ডাকে, সেটাও করা যাবে না। অন্যের পেছনে গুজব ছড়ানোও বুলিং। ধর্ম-বর্ণ-জাতিগত পরিচয় নিয়ে কাউকে যেমন অপমান করা যাবে না; তেমনি অঞ্চল ধরে কথা বলাও বুলিংয়ের বাইরে নয়। সাইবার বুলিং এই নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং এটি জরুরি ছিল। বর্তমানে ইন্টারনেটের বিস্তৃতির কারণে সাইবার বুলিং এবং সাইবার অপরাধ যে হারে বাড়ছে, বিষয়টি আরও গুরুত্ব পাওয়া উচিত ছিল।