প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত একটি নির্ভুল প্রতিবেদনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জন্য বানানো একটি ফটোকার্ডের জেরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে। বাসা থেকে তুলে নেওয়ার ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় পর তাঁকে রমনা থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে নেওয়া হয়। এ সময় আদালত জামিনের আবেদন নাকচ করে শামসুজ্জামানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
অথচ কারাগারে পাঠানো তো দূরের কথা, সংবাদসংশ্লিষ্ট অভিযোগে শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাই তো গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, এর জন্য রয়েছে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল নামের আধা বিচার বিভাগীয় একটি সংস্থা। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কোনো খবর যদি সাংবাদিকতার নীতিমালা পরিপন্থী মনে হয়, তাহলে প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ জানাতে হবে। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট ১৯৭৪-এর ১২ ধারা অনুযায়ী, কোনো সংবাদপত্র, সংবাদ সংস্থা বা সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কেউ নালিশ করলে তার বিচার করবে প্রেস কাউন্সিল। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা সংস্থাকে কাউন্সিল তিরস্কার, নিন্দা বা হুঁশিয়ার করতে পারে। এ বিষয়ে প্রেস কাউন্সিলের পুরো রায় প্রকাশ করতে বাধ্য করতে পারে। সাংবাদিকতার নীতিমালা ভঙ্গ করে কোনো সংবাদ প্রকাশ করা হলো, এটাই হতে পারে শাস্তির যথাযথ প্রক্রিয়া, সাংবাদিককে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া নয় বা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জেল খাটানোও নয়।
আমরা দেখলাম, সাংবাদিক শামসুজ্জামানের ক্ষেত্রে প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ না দিয়ে ন্যক্কারজনকভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ব্যবহার করা হলো। মঙ্গলবার গভীর রাতে একজন যুবলীগ নেতা এবং বুধবার গভীর রাতে এক আইনজীবী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা করেন শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে রমনা থানায় আইনজীবী মশিউর মালেকের করা মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরবর্তী মামলাটিতে আসামি করা হয়ে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকেও।
এসব মামলায় ২৬ মার্চ প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন সম্পর্কে একাত্তর টেলিভিশন চ্যানেলে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে যে, শামসুজ্জামান তাঁর প্রতিবেদনে ছবি ব্যবহারের জন্য ৭ বছরের এক শিশুকে ১০ টাকা দিয়েছিলেন, সংবাদে একটি উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয় যা আসলে শিশুটির ছিল না, শিশু সবুজকে দিনমজুর জাকির হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয়েছে এবং এভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা পরিচয় ও মিথ্যা উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে ইত্যাদি। (এবার প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা, ৩০ মার্চ ২০২৩)