পুরান ঢাকার সিদ্দিক বাজারের যে ভবনে মঙ্গলবার বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তার পেছনেই সরু গলির ভেতর ঘিঞ্জি আবাসিক এলাকা। একদিন পর বিকালে সেখানে মোড়ের দোকানে পুরি, বেগুনি, চপ খেতে খেতে স্থানীয়রা আলাপ করছিলেন ‘নিমতলী’ আর ‘চুড়িহাট্টা’ নিয়ে।
পুরান ঢাকারই নিমতলী আর চুড়িহাট্টায় শত প্রাণহানির ট্রাজেডি মুখস্থ তাদের, তবে নিজেরাও যে একই ঝুঁকিতে, তা মানতে নারাজ এখানকার ব্যবসায়ীরা। আর বছরে পর বছর ধরে দায় এড়িয়ে থাকছে এসব দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থাগুলোও।
সিদ্দিক বাজার থেকে নিমতলীর দূরত্ব ছয় কিলোমিটারও নয়। আরেকটু গেলে চকবাজারের চুড়িহাট্টা। এই পুরো এলাকাটাই ঘিঞ্জি, সড়কগুলোর বেশিরভাগই সরু গলি, ভবনগুলো গায়ে গা লাগানো। এর মধ্যেই গড়ে উঠেছে পাইকারি সব ব্যবসা কেন্দ্র, যেখানে দিনে লেনদেন কোটি কোটি টাকার।
২০১০ সালে নিমতলীর রাসায়নিক গুদাম থেকে লাগা আগুনে প্রাণ হারান শতাধিক মানুষ। এরপর আরও অনেক ছোটখাট আগুন দেখেছে এলাকার মানুষ। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবার বড় আগুন দেখতে হয় চকবাজারের চুড়িহাট্টায়, প্রাণ হারান ৭০ জন।
সর্বশেষ মঙ্গলবার সিদ্দিক বাজারে ক্যাফে কুইন ভবনের বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল পুরো এলাকা, তবে তা স্থানীয়দের টনকে কাঁপন ধরাতে পেরেছে কি? নিমতলীর আগুনের পর পুরান ঢাকার রাসায়নিকের কারখানা ও গুদাম সরিয়ে নেওয়ার যে পরিকল্পনা ও উদ্যোগ শুরু হয়েছিল, তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।
সিদ্দিক বাজারের যে ভবনটিতে মঙ্গলবার বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তার পেছনেই লম্বা সরু গলি। ভেতরে গায়ে গা লাগানো ভবন। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনেও এখানে আধো অন্ধকার। গলির মধ্যে রবারের তীব্র গন্ধ, চারদিকে স্যান্ডেলের পাইকারি দোকান ও গুদাম।
পুরান ঢাকার অন্য এলাকাগুলোর মতো এখানেও দোকান ও গুদামগুলো সব আবাসিক ভবনের নিচতলা বা অন্যান্য তলায়। গলি ধরে ভেতরে একটু এগোলে মোড়ে পুরি-বেগুনি-চপের দোকান। বিস্ফোরণের পর এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় বিকালের নাস্তার জন্য অনেকেরই ভিড় সেই দোকানে। তাদের আলাপের বিষয়বস্তু ভবনের বিস্ফোরণ।
নিমতলী আর চুড়িহাট্টার সঙ্গে তুলনা করে নিজেদের ‘ভাগ্যবান’ ভেবে একজন বলে উঠলেন, “ভাগ্যিস আগুন লাগে নাইক্কা, লাগলে খবর আছিল।”
আপনাদের তো কোনো প্রস্তুতি নেই, আগুন লাগলে কী করবেন- জানতে চাইলে মো. আলতাফ নামের ওই ব্যবসায়ী বলেন, “আমাগো এইহানে তো কোনো কেমিকেল নাই। সব স্যান্ডেল আর স্যানিটারির মার্কেট।”