দুর্নীতি যুগে যুগে চেহারা পাল্টায়। আর্থিক কেলেঙ্কারি, ব্যাংকের টাকা নয়ছয়, ঘুষ, আত্মসাৎ, কমিশন প্রথার পর ২০১৯ সালে শোনা গেল ক্যাসিনো দুর্নীতির নাম। শুদ্ধি অভিযান নামে সরকারের এক আকস্মিক তৎপরতায় ২০১৯ সালে ক্যাসিনোকাণ্ড মানুষের সামনে আসে।
২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়। দেড় মাস ধরে চলা সেই অভিযানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটসহ ১১ জন গ্রেপ্তার হয়েছিল।
অনেকেই দেশ ছেড়েছে। সম্রাট মুক্তি পেয়েছে, ফিরে এসেছে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড থেকে রাজনৈতিক অঙ্গন-সব জায়গার আলোচিত নাম মমিনুল হক সাঈদ ওরফে ক্যাসিনো সাঈদ।
ঢাকার স্পোর্টস ক্লাবগুলোর দুর্দশা অনেকদিনের। এক সময় জমজমাট ছিল এসব ক্লাব। তারা প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল, ক্রিকেট, হকি খেলত। কিন্তু সেই চর্চায় কোথায় যেন ছেদ পড়ে ক্লাবগুলো হয়ে যায় বর্ণহীন। কিন্তু সেইসব বর্ণহীন ক্লাবের ভেতর যে এমন রঙিন এক ক্যাসিনো দুনিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেটা জানা গিয়েছিল র্যাবের সেই অভিযানের পর।
বিদেশ থেকে আমদানি করা জুয়ার সামগ্রী বসিয়ে আসর মাতিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাধর একশ্রেণির ক্লাব কর্মকর্তা যাদের সাথে খেলাধুলার কোনো সম্পর্ক ছিল না। পুরান ঢাকায় এনু-রূপম নামের দুই ভাই তো টাকা গোনার জন্য ব্যাংকে ব্যবহৃত ম্যাশিন পর্যন্ত বসিয়েছিল।
অভিযান শুরুর দেড় মাসের মধ্যে আর কোনো আলোচনা নেই। সব থেমে গেল হঠাৎ করেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সূত্রে গণমাধ্যমগুলো খবর দেয় যে, শুদ্ধি অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের মুখ থেকে কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তার নাম বেরিয়ে আসে।
এই নামগুলো শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়ে পরবর্তী নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল। জবাব পাওয়া যায়নি বিধায় অভিযানের আর কোনো অগ্রগতি চোখেও পড়েনি।
সবাই ভুলেই গিয়েছিল। তবে মনে করিয়ে দিলেন ক্যাসিনো সাঈদ।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) পলাতক সাঈদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। অর্থাৎ, পাসপোর্ট ব্যবহার করে বৈধ পথে দেশে ঢুকতে বা বের হতে গেলেই তার গ্রেফতার হওয়ার কথা। কিন্তু তিনি নির্বিঘ্নেই ফিরেছেন।
গণমাধ্যম বলছে, যুবলীগের সাবেক নেতা এই ক্যাসিনো সাঈদের দেশে ফেরার কোনো তথ্য নেই ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে। তার পাসপোর্টের তথ্য বলছে, সাড়ে তিন বছর আগে তিনি আকাশপথে সিঙ্গাপুর গেছেন আর ফেরেননি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তিনি এখন ঢাকায়। এবং ফিরে এসে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভারও গ্রহণ করেছেন। এখন মতিঝিলের ক্লাব পাড়া আবার তার নিয়ন্ত্রণে।