জয়নাবের দুধভাত বৃত্তান্ত

দেশ রূপান্তর অধ্যাপক আব্দুল বায়েস প্রকাশিত: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৪১

এক


আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘দুধভাতে উৎপাত’ গল্পে অসুস্থ জয়নাবের খুব ইচ্ছা হয় দুধভাত খেতে। তার ইচ্ছাটা গরিবের ঘোড়ারোগ নয় মামুলি একটা শখ। অবশ্য, জয়নাবের একটা গাভী ছিল কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে ওটা হাতছাড়া হয়ে যায়। যখন গাভী ছিল তখন দুধের বিনিময়ে চাল কিনে আনতে হতো এবং ওখানেও পেট্রোন-ক্লায়েন্ট সম্পর্ক থাকতেও পারে শুধু আমার কাছে দুধ বিক্রি করবে এবং শুধু আমার কাছ থেকে চাল কিনবে। কিন্তু লেখক যেহেতু, কোনো ইঙ্গিত রাখেননি, তাই সে ব্যাপারে নিশ্চিত নই। জয়নাবের ঘরে দুধ ও ভাত দুটোরই প্রকট অভাব দেখা দিয়েছিল দেড় পোয়া দুধের সঙ্গে দেড় সের চালের ভাত, গুড় ও সবরি কলা দিয়ে মেখে সাতজনে খেত; জয়নাবের জন্য বরাদ্দ থাকত শেষ দুই লোকমা। যাই হোক, এক সময় দুধভাত চাওয়ার অপূর্ণতা নিয়ে শেষ যাত্রা করে জয়নাব।



দুই


বাংলাদেশে এখন ভাতের অভাব নেই বললেও চলে এমনকি ক্রয়ক্ষমতা কিংবা এনটাইটেলমেন্ট নিরিখে দেখলেও। কখনো-সখনো চালের দাম চাঙ্গা থাকে তবে প্রকৃত মজুরি সমন্বয় করে কিংবা খোলাবাজারে সরকারি কম দামি চাল কিনে গরিব কোনোমতে দুমুঠো অন্নের সংস্থান করে। দুধের অভাব আছে তবে আগের মতো অত প্রকট নয়। গ্রামের জয়নাবরা এখন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গাভী কেনে, একাধিক গাভীর দুধ বাজারজাত করে, ফাঁকফোকরে একটু-আধটু নিজে খায় এবং অন্যদের খাওয়ায়। বাংলাদেশে এখন প্রায় প্রতিটি খানায় গড়পড়তা একাধিক গবাদি প্রাণী আছে। তবে ওই যে কথায় আছে, ‘এই দিন দিন নয় আরও দিন আছে, এই দিন নিয়ে যাবে সেদিনের কাছে’ ব্যক্তিমালিকানার কারখানাগুলো বাড়ি বয়ে এসে দুধ নিয়ে যায় চিলিং সেন্টারে।


প্রায় চার কোটি টন খাদ্যশস্য (চাল সাড়ে তিন কোটি) দেশে উৎপন্ন হয় বলে শুনছি; বর্তমানে খাদ্যশস্যের বৃদ্ধির হার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি বিধায় ম্যালথাসের দুঃস্বপ্ন বাস্তব হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই বললেই চলে। তার ওপর সুখবর যে, খানাপিছু চালের ভোগ নিম্নমুখী। অবশ্য, এই আলোকিত ঘটনার অন্ধকার দিকটা হচ্ছে এই যে, প্রান্তিক উন্নতি ঘটা সত্ত্বেও অপুষ্টিজনিত অবস্থা এখনো চরম উদ্বেগের বিষয়।


দুর্ভাগ্যবশত, গ্রামীণ বাংলার কৃষি খাতের ইতিহাস ও গবেষণা মূলত চাল-কেন্দ্রিক। তা যেকোনো কারণেই হোক কবির কথা ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’ অথবা হুঙ্কার ‘ভাত দে হারামজাদা নইলে মানচিত্র খাবো’ কিংবা ম্যালথুসিয়ান দুঃস্বপ্ন। এমন ঘোরে পতিত আমাদের চিন্তাচেতনায় চালকের আসনে বসে থাকে স্বয়ং চাল। এখনো চাল নিয়ে যত চুলচেরা বিশ্লেষণ বা কাগজ চালাচালি হয়, অন্য কোনো পণ্যের বেলায় তা হয় না। প্রধান খাদ্য বলে কথা। চাল আমাদের প্রধান খাদ্য এবং বিশেষত দরিদ্র শ্রেণি আয়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ব্যয় করে চাল ক্রয়ে। এ দেশের রাজনীতি ভাতের রাজনীতি বললেও বোধকরি ভুল হবে না।


তিন


কিন্তু সময়ের বিবর্তনে, বিশেষত গ্রামীণ খানার আয়বর্ধনে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে, কৃষি খাতকে টপকে যেতে লাগল অ-কৃষি খাত। একটা গবেষণা বলছে, ১৯৮৮ সালে একটা গ্রামীণ খানার গড়পড়তা আয় ছিল ১৫৭ ডলার যেখানে খানার মোট আয়ের কৃষির অবদান প্রায় ষাট ভাগ। এর বিপরীতে ২০১৪ সালে আয় দাঁড়ায় ৫৩১ ডলার এবং কৃষির অবদান নেমে আসে প্রায় চল্লিশ ভাগে। অন্য কথায়, এখন গ্রামীণ খানার মোট আয়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অবদান রাখে অ-কৃষি কর্মকাণ্ড; যথা ব্যবসা-বাণিজ্য, সেবা, বাইরে থেকে প্রেরিত অর্থ, অ-কৃষি মজুরির বিনিময়ে আয় ইত্যাদি। একটা নির্দিষ্ট উদাহরণ দেওয়া যাক, ভিত্তি বছরে গ্রামীণ খানার মোট আয়ের মাত্র আট ভাগ আয় আসত রেমিট্যান্স থেকে আর এখন আসে মোট আয়ের ৩০-৪০ ভাগ।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us